বাংলাদেশের ঐতিহ্যের গর্ব ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দলনেতা ও ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা এ স্বীকৃতিকে “বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরব” বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পীরা যে ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন, এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাঁদের শ্রম, সৃজনশীলতা ও সম্মানের প্রতিফলন। রাষ্ট্রদূত তালহা এই অর্জন দেশের তাঁতি সম্প্রদায় ও সকল নারীর প্রতি উৎসর্গ করেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস ইউনেস্কোর নির্ধারিত কাঠামো অনুসরণ করে টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্পকে নিবন্ধনের আবেদন করে। প্রাথমিক মূল্যায়ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত অনুমোদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ সফলভাবে উত্তীর্ণ হয় আবেদনটি। কারিগরি জটিলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নথি প্রস্তুত করা হয় সম্পূর্ণ নিজস্ব দক্ষতায়।
টাঙ্গাইল শাড়িকে ঘিরে সাম্প্রতিক বিতর্কও নতুন স্বীকৃতির আলোচনায় উঠে আসে। ২০২৩ সালে ভারত টাঙ্গাইল শাড়িকে তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে ঘোষণা করলে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তবে ইউনেস্কোর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদ বাংলাদেশের জমা দেওয়া নথিকে “উচ্চমানসম্পন্ন” বলে উল্লেখ করে এবং এই স্বীকৃতির ফলে পূর্ববর্তী জটিলতা অনেকটাই নিরসন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ভারতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নে ভারতের বাংলাদেশ হাইকমিশনার মু. রিয়াজ হামিদুল্লাহ জানান, আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অধীনে নিবন্ধন হওয়ায় এর বৈধতা প্রশ্নাতীত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের নারীদের কাছেই শাড়ি জনপ্রিয়; ফলে এই স্বীকৃতি তাঁদের প্রিয় পোশাককে নতুন মর্যাদা দেবে।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২২ সালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ চার বছরের জন্য ইউনেস্কো ২০০৩ কনভেনশনের আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। পর্ষদের ১৮তম সভায় ‘ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র’ স্বীকৃতি পায়।
গত ৭ ডিসেম্বর পর্ষদের ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল এনানি। সভা ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এর আগে বাংলাদেশ বাউল গান (২০০৮), জামদানি বুনন শিল্প (২০১৩), মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬), শীতলপাটি বুনন শিল্প (২০১৭) এবং ২০২৩ সালে ‘ঢাকার রিকশা ও রিকশাচিত্র’ ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি অর্জন করে।