ঢাকা প্রেস নিউজ
পুলিশ সংস্কার কমিশন র্যাবের অতীত কার্যক্রম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পর্যালোচনা করে এর প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি), সফর রাজ হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কার সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সরাসরি তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে প্রতিটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে একটি মানবাধিকার সেল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষায় একটি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, এবং অবিলম্বে নতুন হেল্পলাইন চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
১. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন: গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা দ্রুত কার্যকর করতে আইন ও বিধি সংশোধনের প্রস্তাব।
২. জিজ্ঞাসাবাদের স্থান নির্ধারণ: প্রতিটি থানায় স্বচ্ছ কাঁচের ঘেরাওযুক্ত আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ স্থাপন।
৩. মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা: থানাহাজত ও কোর্ট হাজতের পরিবেশ উন্নয়ন এবং বন্দিদের পরিবহনের যানবাহনে পরিচ্ছন্নতা ও মানবিক সেবা নিশ্চিত।
৪. নারী আসামির প্রতি সম্মান: নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে নারী আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ।
৫. পুলিশ পরিচয়ের সুরক্ষা: তল্লাশির সময় পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত না হলে জরুরি কল সার্ভিস চালু।
৬. জিপিএস ও ভিডিও রেকর্ডিং: অভিযান পরিচালনার সময় প্রত্যেক সদস্যকে জিপিএস ট্র্যাকিং ও বডি ক্যামেরাসহ পোশাক পরিধান।
৭. রাতের তল্লাশি নিয়ন্ত্রণ: রাতের তল্লাশিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতি নিশ্চিত।
৮. মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ: এফআইআর গ্রহণ ও তদন্তে সার্কেল অফিসার বা পুলিশ সুপারের কঠোর তদারকি।
৯. অযথা গ্রেপ্তার বন্ধ: আদালতের অনুমতি ছাড়া এফআইআর বহির্ভূত আসামি গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ।
১০. ভুয়া মামলা প্রতিরোধ: অনির্দিষ্ট বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার প্রমাণ হলে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
১১. গায়েবি মামলার অপব্যবহার রোধ: অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার অপচর্চা বন্ধ এবং দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা।
১২. মিডিয়া নির্দেশিকা: আদালতের রায়ের আগে কোনো ব্যক্তিকে মিডিয়ার সামনে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন নিষিদ্ধ।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে হত্যা বা আহত করার ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করা হয়েছে।
এই সুপারিশগুলো কার্যকর হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।