আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
ঢাকা প্রেসঃ
কুড়িগ্রামে পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে উঁচু জমিতে গ্রীষ্মকালিন বেবী তরমুজ চাষ করেছেন রাজারহাটের কৃষক শফিকুল। তিনি এটি চাষে লাভবান হয়েছেন অনেক। মাত্র তিন মাসের মধ্যে তিনি তরমুজ ঘরে তুলবেন। মাত্র ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে দেড় লাখ টাকা আয় করতে পেরে খুশি তিনি।
জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরের বাড়ী এলাকার রাজমিস্ত্রী শফিকুল ইসলাম স্বপনের স্ত্রী লাভলী বেগম। তিনি নিজেই এই তরমুজ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাঁড়া ফেলেছেন। কলেজে পড়ুয়া মেয়ে ও স্কুলে পড়ুয়া ছেলে সন্তানের খরচ মেটাতে শফিকুল ইসলাম স্বপন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। স্বামী বাড়িতে না থাকায় লাভলী বেগম তার ২০ শতক জমিতে এবার ব্লাক ডায়মন্ড কালারের বেবী তরমুজ চাষ করে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন।
নারী কৃষক লাভলী বেগম জানান, স্থানীয় বেসরকারি একটি সংগঠন থেকে তিনি জানতে পারেন স্বল্প সময়ে মালচিং পদ্ধতিতে সুস্বাদু তরমুজ চাষ করা যায়। পরে তিনি তা চাষ করতে চাইলে সংগঠনটি এগিয়ে আসে।
তিনি বলেন, তাদের কাছে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে এই প্রথম এই এলাকায় বেবী তরমুজ চার করেছি। জমি তৈরী, সার ও বীজ কেনায় আরডিআরএস থেকে তিনি ১৫ হাজার টাকা সহায়তা পান। এরপর ফেন্সিং তৈরী করতে তার নিজের খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে তিনি তরমুজ চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। প্রায় ৩ মাসের মধ্যে প্রায় এক হাজারের উপর তরমুজ গাছে বেড়ে উঠছে।
রাজমিস্ত্রী শফিকুল ইসলাম স্বপন জানান, আমার স্ত্রী আর মেয়ে সুমী মিলে তরমুজ চাষে সহযোগিতা করেছে। আমি বাইরে ছিলাম। বাড়িতে এসে কালোসোনা রঙের তরমুজ বৃদ্ধি হতে দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি। পাইকারদের সাথে কথা হয়েছে তারা ৩৫ টাকা কেজি দরে তরমুজ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমার জমিতে প্রায় এগারো শতের মত তরমুজ আছে। গড়ে ৫ কেজি করে ওজন হবে। আমি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। এতে খরচ মিটিয়ে দেড় লক্ষ টাকার মতো আয় হবে।
তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব পলিথিন দিয়ে বেবী তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়ায় অনেকে শুধু দেখতে আসেননি। তারা চাষের কায়দা কানুনও জানতে এসেছেন। যাতে নিজেরাও চাষ করতে পারেন।
বেসরকারি সংগঠনের সহায়তাকারী বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, স্মার্ট লাইভলিহুড কৃষি ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণে আর্থিক সহায়তায় কুড়িগ্রাম জেলায় গতবছর থেকে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। যা কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সারা ফেলেছে।
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুন্নাহার সাথী জানান, বর্তমানে উচ্চমূল্য ফসলের মধ্যে তরমুজ একটি অন্যতম ফসল। তরমুজ মূলত চরাঞ্চলের ফসল। কুড়িগ্রামে প্রায় সাড়ে ৪শত চরাঞ্চল রয়েছে। চরগুলোতেও এই ফসলটি আমরা সম্প্রসারণ করতে পারি। কৃষকদের চাষাবাদ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা হলে ব্যাপকভাবে এর সম্প্রসারণ ঘটাতে পারি।