ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে গেল বন্যায় উপজেলার চর শাখাহাতি ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীভাঙনের কবলে পড়লে ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। সে সময় প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ হাজার ইট সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তবে সে সব ইট নিলাম প্রক্রিয়া ছাড়াই বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে ৷ তবে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কমিটির রেজুলেশন ও নিলাম ছাড়াই অবৈধ পন্থায় দুটি ভবন, ১টি ওয়াশ ব্লক এবং শহীদ মিনারের প্রায় ৪০ হাজার ইট বিক্রি করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, চর শাখাহাতী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বিদ্যালয়টি নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে অন্যত্র স্থানান্তর করা হলেও ওই বিদ্যালয়ের ২টি ঘর, ওয়াশ ব্লক এবং শহীদ মিনারের প্রায় ৪০ হাজার ইট রেজুলেশন ও কোনো নিলাম ছাড়াই বিদ্যালয়টির সভাপতি মশিউর বিক্রি করে দেন কালা চাঁন, হাসান, মাফুজারসহ বিভিন্ন জনের কাছে। প্রতি হাজার ইট ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নেন তারা। তারা দ্রুত ইটগুলো সরিয়ে ফেলেন।
স্থানীয় হাসান বলেন, আমি শেষ সময় ভাঙাচুরা ইট মিলে ৪ হাজার টাকার কিনেছি। টাকাটা সভাপতি (মশিউর) কে দিয়েছি৷ ওখানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো ইট বিক্রি করেছে।
অফিস সহায়ক মিলন বলেন, স্কুল সরানোর প্রথম দিন ৫ হাজার ইট বিক্রি করা হয়েছে। এরপর প্রায় সাড়ে ৮ হাজার ইট বিক্রি করা হয়েছে। প্রতি হাজার ইট ৬-৭ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোছা. সাহিদা খাতুন জানান, তিন মাস হলো যোগদান করেছি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
প্রতিষ্ঠানটির সহসভাপতি সাহেরা খাতুন বলেন, আমি সভাপতির কাছে জানতে চেয়েছি ইটগুলো কোথায়। আমাকে ডেকেছিলেন। তখন আমার বাড়ি সরানোর কাজ চলছিল, তাই যেতে পারিনি। এখন সভাপতি বলছে রফিকুল মেম্বারকে ইটের দায়িত্ব দিছে। উনি কি করছে সেটা জানা নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, কমিটির লোক আছে রফিকুল চাচা (মেম্বার), তাদের কাছে শোনেন। ইউএনও স্যার টিও স্যারকে বলেন, ওনারা যাক। এটা একটা গুজব ছড়াইতেছে। স্কুল স্থানান্তর করাতে দুই লাখ টাকা আমার খরচ হয়ে গেছে। ইট বিক্রি করে কি আমার বাপ-মাকে খাওয়াইছি? স্কুল নদীগর্ভে ভেঙে গেছে। ইটগুলো বেচা হইছে। আমি জানি না, রফিকুল চাচা জানে। আমি চাকরি করি, উলিপুরে থাকি। ইটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে ফোন দিবেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জানান, স্কুলটি স্থানান্তরে ৯০ হাজার টাকা খরচের হিসাব অফিসে দেওয়া হয়েছে। ইট বিক্রি করে লেবারদের টাকা দেওয়া হয়েছে কোনো নিলাম করা হয়নি। ৫ হাজার ইট আত্মসাৎতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম কিন্তু ইট বিক্রি করে টাকা আমি নেইনি মিলন(দপ্তরী) নিয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভার.) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলটি ভাঙার সময় সভাপতি বলেছিল ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে পরে আমরা ইউএনওর সঙ্গে বসে ৬০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি খরচ বাবদ। শেষ পর্যন্ত তিনি এক টাকাও পাননি, তবে পরে জানতে পেরেছি তিনি ২-৩ নৌকা ইট সরিয়ে নিয়েছেন, বাকিগুলো সরানো সম্ভব হয়নি। তবে নিলাম হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ওই কর্মকর্তা।
ইউএনও মিনহাজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।