ঢাকায় নাগরিক আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ: মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ না করানোয় ক্ষোভ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২২ জুন ২০২৫ ০৪:২৬ অপরাহ্ণ   |   ৬৮ বার পঠিত
ঢাকায় নাগরিক আন্দোলনের তীব্র প্রতিবাদ: মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে শপথ না করানোয় ক্ষোভ

ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-


ঢাকা, ২২ জুন ২০২৫ – স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং নাগরিক সেবা ব্যাহত করার অভিযোগে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকাবাসী। বাংলাদেশ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট এবং আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে রিটকারীর আবেদন খারিজ হওয়া সত্ত্বেও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না করানোর প্রতিবাদে নগর ভবন চত্বরে এবং বাইরে হাজার হাজার জনতা মানববন্ধন, মিটিং-মিছিল, অবস্থান ধর্মঘটসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে।


নাগরিক আন্দোলন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মসিউর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয়েছে, তাদের একমাত্র দাবি হলো আইনি প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বিজয়ী ঘোষিত এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশিত ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে অবিলম্বে মেয়র হিসেবে শপথ পাঠ করানো।


আন্দোলনকারীরা অত্যন্ত দুঃখ ও বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে অবজ্ঞা করে, ষড়যন্ত্রমূলক এবং স্বৈরাচারী কায়দায় জনআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। দীর্ঘ এই আন্দোলনের সময় প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন নিজে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নাগরিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং আন্দোলনরত জনগণের মাঝে উপস্থিত থেকে নগরের জরুরি নাগরিক সেবা চালু রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি বারবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ঢাকাবাসীকে ধৈর্য সহকারে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলারও আহ্বান জানান।


নাগরিক আন্দোলন কমিটির অভিযোগ, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা নগরবাসীর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অসৎ প্রয়াসে লিপ্ত রয়েছেন। আন্দোলনের মধ্যে তিনি বর্জ্য পরিবহণের গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে এবং জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক ও ওয়ারিশান সনদে স্বাক্ষর না করতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। মশক নিধন, বর্জ্য অপসারণ, নাগরিক সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশান সনদপত্রের মতো দৈনন্দিন নাগরিক সেবাগুলো পরোক্ষভাবে বাধাগ্রস্ত করে এর দায়ভার আন্দোলনকারী জনতার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপকৌশলে জনাব সজীব ভূঁইয়া লিপ্ত আছেন বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। নাগরিক আন্দোলন এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।


আন্দোলনরত ঢাকাবাসীকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলার এবং জরুরি নাগরিক সেবা সমূহ নির্বিঘ্ন করার সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মরত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা ও দপ্তর, হিসাব ও অডিট বিভাগ, সমাজ কল্যাণ বিভাগ, আইন বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, সম্পত্তি বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ, বিদ্যুৎ সার্কেল, যান্ত্রিক সার্কেল, সংস্থাপন শাখা, নিরাপত্তা শাখা, জনসংযোগ বিভাগ, আইসিটি সেল, নগর পরিকল্পনা বিভাগ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সহ সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ অফিসে কর্মরত থেকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ, যেমন: জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশান সনদ, বিভিন্ন ধরনের প্রত্যায়ন পত্র, সকল প্রকার পৌর ও বাজার কর আদায়, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধন কার্যক্রম, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম, সড়ক বাতি প্রজ্জ্বলন সচল রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।


নাগরিক আন্দোলন কমিটি বিশ্বাস করে, জনগণই এই দেশের প্রকৃত মালিক এবং সঠিক সময়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এমন ফ্যাসিবাদী ও বেআইনী কার্যকলাপের জবাব দেবে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণী-পেশার নাগরিক, যুব সমাজ, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবী, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রতিটি সচেতন নাগরিককে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।


পত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোন দালাল শ্রেণী, স্বৈরাচারের দোসর, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর, দুর্নীতিবাজ কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে বা আঞ্চলিক কার্যালয় সমূহে কোথাও প্রবেশ করতে পারবে না এবং তাদের সকল স্থানে দেখা মাত্রই প্রতিহত করা হবে। যদি কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অর্থাৎ নাগরিক সেবায় অপারগতা এবং গাফিলতি করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


এছাড়াও, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে পাহাড়সম দুর্নীতি থাকায় তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা কোন ক্রমেই বাস্তবায়িত হতে দেওয়া হবে না এবং সকল প্রকার নব নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।


নাগরিক আন্দোলন কমিটি একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সর্বদা প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।