নিজস্ব প্রতিবেদক:-
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর রশিদুল হাসানকে (পরিচিতি নম্বর-৭৬৩৭) সচিব করার পাঁয়তারা করছে একটি চক্র। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রকাশ্য সমর্থনকারী এই কর্মকর্তাকে কেন এখনও ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়নি, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও এর আগে তিনি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ওবায়দুল কাদেরের সবচেয়ে প্রিয় ও আস্থাভাজন লোক ছিলেন।
জানা গেছে, নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির কাছেই রশিদুল হাসানের বাড়ি। ছাত্র জীবন থেকেই ওবায়দুল কাদেরের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল বলেও জানা গেছে। মূলত ছাত্রাবস্থা থেকেই ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল রশিদুল হাসানের। ক্ষমতায় থাকাকালে ওবায়দুল কাদের তাকে সেতু বিভাগে যুগ্মসচিব (প্রশাসন) ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব দেন। সূত্র বলছে, অফিস সময়ের পরেও ওবায়দুল কাদেরের বাসায় ছিল তার অবাধ যাতায়াত।
বিসিএস (গণপূর্ত) ক্যাডারের ১৫ ব্যাচের দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তা ঘুষ বাণিজ্য এবং তোষামোদীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তৎকালীন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে কব্জা করে ফেলেন। তার অপতৎপরতায় তৎকালীন সেতু সচিবরাও ছিলেন অসহায়। কার্যতঃ তিনি-ই সচিবের ভূমিকা পালন করতেন। ওবায়দুল কাদেরের সকল অপকর্মের তিনি ছায়া সংগী ছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের ওপর ভর করে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলেন। (ছবি)। তার অভিনব অভিনয় এবং মিথ্যাচার সাবেক মিথ্যাবাদী, অভিনেত্রী খুনি হাসিনাকেও হার মানিয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতির খোলা-বাজার পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ও কর্নফুলি টানেলের রাজসিক উদ্বোধনের মাস্টার মাইন্ড ও প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন এই রশিদ।
তিনি প্রকৌশলী হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেতু ভবন-কে কিভাবে লুটপাট করা যায় তা টার্গেট করে ও ওবায়দুল কাদেরের ওপর ভর করে ‘ঘুষ এবং দুর্নীতি’র মাধ্যমে প্রাপ্ত অবৈধ অর্থ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন।
সেতু ভবনের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদেরকে অর্থ এবং রাতের অন্ধকারে নারী সরবরাহ করতেন রশিদ (ছবি-রাতের অন্ধকারে)। শেখ মুজিব ও শেখ রাসেলের জন্ম দিনসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম উপলক্ষে ব্যক্তি পূজার চরম নিদর্শণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, তার মত ফ্যাসিস্ট সরকারের একজন দোসরের নাম সচিবের তালিকায় উঠে আসায় সিভিল প্রশাসনের সাধারণ সদস্যগণ হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সূত্র জানায়, ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সেতু বিভাগে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। ঐ সময়ে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার ভয়ে তটস্থ ছিলেন। ওই সময় তার কথা না শোনায় অনেকেই শাস্তিমুলক বদলির শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সেতু বিভাগ থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়ারও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রশিদুল হাসানের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ৫ আগস্ট এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরপরই পতিত সরকারের আমলে দানব বনে যাওয়া এই কর্মকর্তা হঠাৎই নিজেকে আড়াল করে ফেলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের রয়ে যাওয়া দোসরদের সহায়তায় ভোল পালটে সেতু বিভাগেই রয়ে যান। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/ বিভাগের অনেক কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হলেও তার স্বভাবসুলভ চাটুকারিতার কারণে তিনি বহাল তবিয়তে ছিলেন।
পরবর্তীতে এ সব বিষয় গণমাধ্যমে উঠে এলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিঃ (বোয়েসেল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে বদলি করা হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেস্টা জনাব আসিফ নজরুল তাকে গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। পরে কিছুদিন ঝুলে থাকার পর গত ০৬ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদায়ন লাভ করে সবচেয়ে লাভজনক শাখাটি ভাগিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, শিল্প সচিব তার ব্যাচমেট বিধায় তাকে বিভ্রান্ত তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এর চেয়ারম্যানের পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন। সেখানে তিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান লুটে পুটে খাওয়ার পায়তারা করছেন। হায়রে বাংলাদেশ! যেখানে সমজাতীয় ফ্যাসিস্ট এর দোসররা ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরে গেছেন সেখানে তিনি পেয়েছেন আলাদিনের চেরাগ! তার এতো ক্ষমতার উৎস কোথায়?
সেতু বিভাগে চাকুরিকালে তৎকালীন ফ্যসিস্ট সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে তার অত্যধিক সখ্যতার কারণে অসংখ্যবার সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব অবৈধভাবে লাভ করেন।
সচিবের রুটিন দায়িত্বের বদৌলতে বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট নিজের সম্পর্কে মিথ্যা, অসত্য এবং বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে তার আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। ফলে একদিকে যেমন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন অন্যদিকে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছেন। পতিত সরকারের সাথে রশিদুল হাসানের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে তাকে একের পর এক লাভজনক পোষ্টিং ও ‘সচিব’ করার চেস্টা করছে।
পতিত সরকারের সাথে এত ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও তাকে কেন এখনও ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়নি, তা নিয়ে সকলের মধ্যে সীমাহীন কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। কি যাদুর কাঠি রয়েছে তার কাছে? জুলাই বিপ্লবের সরকারের কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আশির্বাদও তিনি লাভ করছেন।