প্রকাশকালঃ
২৪ মার্চ ২০২৪ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ ৩১৬ বার পঠিত
কোরআন মাজিদ হচ্ছে হিদায়াতের ব্যবস্থাপত্র, যা সাধারণ ডাক্তার বা হেকিমদের ব্যবস্থাপত্রের মতো নয়। কারণ তাঁদের ব্যবস্থাপত্র বুঝতে না পারলে কোনো উপকারে আসে না। আর কোরআন শরিফ হচ্ছে হিদায়াতের এমন ব্যবস্থাপত্র, যা পাঠ করলেই ঈমান বাড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের সামনে কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)
কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। একেকটি অক্ষর পাঠ করলে দশ-দশটি নেকি পাওয়া যায়। এ সওয়াব পাওয়ার জন্য অর্থ বোঝার শর্ত হাদিসে উল্লেখ নেই। উসমান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়বে, সে একটি নেকি পাবে, আর প্রতিটি নেকি ১০ গুণ করে বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে। (তিরমিজি : ২৯১০)
ভালোভাবে কোরআন পড়তে না পারলেও কোরআন পাঠ অব্যাহত রাখবে। এতেও সওয়াব মিলবে। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যারা সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে। আর যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৪)
তদ্রূপ কোরআন শরিফ মধুর কণ্ঠে পড়াও প্রশংসনীয়। হাদিস শরিফে সুন্দর কণ্ঠে পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সুললিত কণ্ঠে কোরআন পড়ো, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ২১৪১)
আর কোরআনের অর্থ বোঝার জন্য কোরআনের আয়াতগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করা ও পড়া প্রথম শর্ত। আর সম্ভব হলে কোরআন বোঝার চেষ্টা করবে। কোরআন বোঝা যদিও একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তবে শুধু শব্দ শেখাও একটি মৌলিক কাজ। হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এ ব্যাপারে সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন—যারা শুধু অর্থের গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে তিলাওয়াতের গুরুত্ব উপেক্ষা করেছে, তাদের অনুধাবন করা উচিত, অর্থ বোঝা শব্দ পাঠের অনুগামী।
প্রথম হলো শব্দের জ্ঞান। আর নীতি হলো প্রয়োজনীয় বিষয়ের সূচনাও প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। তাই শাব্দিক তিলাওয়াত লাভহীন—এ ধারণা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআনের শব্দের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিতেন। তিনি শব্দের প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে ওহি অবতরণকালে জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে দ্রুত আবৃত্তি করতেন। অথচ তাঁর স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। এ থেকে তাঁর শব্দের প্রতি অসাধারণ আগ্রহ অনুধাবন করা যায়।
এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শব্দের প্রতি এত ব্যাকুল হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হলো, তিনি নিজে তিলাওয়াতের পাশাপাশি অন্যের তিলাওয়াতও শুনতেন। একবার ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বললেন, আমাকে কোরআন শোনাও। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমি আপনাকে শোনাব! অথচ আপনার ওপরই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে? নবীজি (সা.) বলেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কোরআন শুনতে ভালোবাসি। (বুখারি, হাদিস : ৫০৪৯)