হোসেন বাবলা (চট্টগ্রাম):-
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১ হাজার ২ শত ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১ শত ৪৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন।
সোমবার সকালে থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনে তিনি এ বাজেট পেশ করেন।
বাজেট বক্তব্যে মেয়র বলেন,২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের সময় চসিকের দেনার পরিমাণ ছিল ৫৯৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ডিএসএল বাবদ বকেয়া ছিল ১৪৬ কোটি টাকা। ধারাবাহিক দেনা পরিশোধের মাধ্যমে বর্তমানে মোট দেনা ৪০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে এবার প্রথমবারের মতো পৌরকর বাবদ ১৪০ কোটি টাকা আদায় সম্ভব হয়েছে।
মেয়র বলেন, উন্নয়ন সহায়তা বরাদ্দ খাতে ৬৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বিশ্ব ব্যাংকের কোভিড-১৯ সহায়তা বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকা ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। আয়কর বাবদ ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ভ্যাট বাবদ ৩৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক ও ভবিষ্যত তহবিল বাবদ যথাক্রমে ১৯ কোটি ১৮ লাখ ও ২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। প্রতি মাসে ৪০০ জনকে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আনুতোষিক প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, জাইকার সহায়তায় আধুনিক বাজেট ও হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে অটোমেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করছি, আগামী অর্থবছরের মধ্যে পুরো হিসাব বিভাগ অটোমেশনের আওতায় চলে আসবে।”
চসিকের আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে মেয়র বলেন, উপযুক্ত উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয় বহুগুণে বাড়বে এবং চসিক আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।
বর্তমানে চসিক এলাকায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৩টি হোল্ডিং ও ১ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৪টি ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। কর ও লাইসেন্স ব্যবস্থাপনা অনলাইনে আনা হয়েছে এবং ৮টি রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে গণশুনানি পরিচালিত হচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে আধুনিকায়ন আনার বিষয়ে মেয়র জানান, ১৯টি খাল থেকে ৪১ লাখ ঘনফুট মাটি ও আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে। ড্রেনেজ পরিষ্কারে ১৪৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, বর্ষায় আরও ২০০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। মশক নিধনে আধুনিক পদ্ধতি ও আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড ব্যবহার শুরু হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগ্রাবাদ বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের দায়িত্ব নৌবাহিনীকে দিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টিতেও জিইসি, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় নি।
মেয়র আরও জানান, আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে দক্ষিণ পাহাড়তলীতে ১০ একর জমি কেনা হয়েছে এবং কুলগাঁও এলাকায় বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “চসিক প্রতিষ্ঠিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়কে পুনরায় চসিকের অধীনে আনা হয়েছে এবং ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মেয়রের চারটি কর্মপরিকল্পনা হলো—চলমান নিয়োগ সম্পন্ন করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং চসিক কার্যক্রম ডিজিটাইজেশনে উদ্যোগ গ্রহণ।
চসিকের প্রসারিত কার্যক্রমের জন্য পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো অনুমোদনের আবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান মেয়র। ‘সিটিজেন চার্টার’ প্রণয়ন করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
চাকরি নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চসিক নিজস্ব জব পোর্টাল চালু করেছে। ১২৩ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়ে।
বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিনের সঞ্চালনায় এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী।