মো. আল-আমিন, (আইটিপি ও ভ্যাট কনসাল্টেন্ট) এর ফেইসবুক পাতা থেকে:
রিটার্ন দাখিল সহজ করতে অনলাইন রিটার্ন বা ই-রিটার্ন চালু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঘরে বসে বা পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে অনলাইনে এই রিটার্ন দেয়া যায়। কিন্তু করফাঁকি দিতে অনেক করদাতা রিটার্নে কোন সম্পদ, ব্যাংকে থাকা এফডিআর, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি কিছুই দেখাচ্ছেন না। বাধ্যতামূলক করায় কারো মাধ্যমে বা দোকানে বসে ‘জিরো বা শূন্য রিটার্ন’ দিয়ে দিচ্ছেন। জিরো রিটার্ন নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। তবে আয়কর আইনে ‘জিরো বা শূন্য রিটার্ন’ কনসেপ্ট বা কোনো নিয়ম নেই বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। তিনি জিরো রিটার্নকে ‘এক্সট্রেমলি ডেঞ্জারাস’ উল্লেখ করে বলেছেন, করদাতা রিটার্নে যা কিছু ডিক্লার করেছেন, সেটা তার বক্তব্য। যদি তা মিথ্যা হয়, তাহলে আয়কর আইনে পাঁচ বছরের জেলের বিধান আছে। সহসাই জিরো রিটার্ন বিষয়ে এনবিআর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে বলে জানান চেয়ারম্যান। শনিবার (৯ আগস্ট) আইসিএমএবি এর একটি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনলাইনে জিরো রিটার্ন দাখিল বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে দেখলাম। একটা আলোচনায়ও আসলো যে, অনলাইনে রিটার্ন দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন কনসেপ্ট জিরো রিটার্ন। সব কিছুতে জিরো ফিলাপ করে দিলেই হয়ে যায়।’ এটা এক্সট্রেমলি ডেঞ্জারাস উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের আয়কর আইনে জিরো রিটার্ন বলে কোন কনসেপ্ট কোন নিয়ম নেই। আপনি ট্যাক্সপেয়ার হিসেবে যা কিছু ডিক্লার করছেন, এটা আপনার বক্তব্য। এটা যদি মিথ্যা হয়, আমাদের আয়কর আইনেও আছে যে পাঁচ বছরের জেল। আমাদের অনেক আইন আছে, কিন্তু এনফোর্সমেন্ট এত দুর্বল।’
আমেরিকার উদাহরণ দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমেরিকার জেলে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষ জেল খাটে করফাঁকির মামলায়। কারণ এটা প্রমাণ করা একেবারে সোজা। কোনো খুনি ১০০টা খুন করেছেন, কিন্তু প্রমাণ হয়নি-সেজন্য সে বেঁচে গেছেন। হয়ত ১০১টার সময় তিনি ধরা পড়ছেন। কিন্তু আয়করের ক্ষেত্রে তা না। খুবই সহজ। আপনার ব্যাংকে এফডিআর আছে। রাজস্ব বিভাগের কাছে তথ্য আছে। আদালতে গিয়ে রেভিনিউ অফিসার বলবেন, মাই লড, উনি জিরো রিটার্ন দিয়েছেন। কিন্তু ব্যাংকে উনার এফডিআর আছে, এই হলো তার ডকুমেন্ট। সুতরাং মিথ্যা হলফের জন্য সব দেশে আইন আছে, আমাদের দেশেও আছে যে পাঁচ বছরের জেল।’
চেয়ারম্যান সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সকলকে বলবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলকে জানাবেন যে, যারা বলে দোকানে বসে বসে জিরো রিটার্ন দেয়া যায়, তা অ্যাবসুলেটলি ডেঞ্জারাস। করদাতা কিন্তু এই দায় এড়াতে পারবেন না। তিনি যদি তার ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড অন্য কাউকে দিয়ে দেন-তারপর বলেন যে আমি তো দেয়নি, অমুকে দিয়েছেন-এ কথা রকম বলার কোন সুযোগ নেই। পেপার রিটার্নের ক্ষেত্রেও সুযোগ নেই, অনলাইন রিটার্নের ক্ষেত্রে মোটেও সুযোগ নেই। কারণ তাকে ডিক্লার করতে হচ্ছে, তিনি যা কিছু দিয়েছেন-তা সত্য দিয়েছেন।’
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান আরো বলেন, ‘আমাদের রেভিনিউ এত কম। আমরা সবাই কাজ করে এই রেভিনিউ বাড়াতে পারিনি। ট্যাক্স দিয়ে কিন্তু কেউ দরিদ্র হয় না। তবে পেনাল্ট্রি এবং জরিমানা দিয়ে অনেকে দেউলিয়া হয়ে যায়। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোম্পানির মালিক জানেও না তার এমপ্লয়ীরা অতিরিক্ত করে একটা বড় আকারের মিসফাইড করে ফেলেছেন। এখন পেনাল্ট্রি যদি এমন হয় যে, এটা দিতে গিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। রেভিনিউ অফিসার হিসেবে আমাদের টার্গেট হলো, ব্যবসা গ্রো করুক। তার থেকে, তার পরের জেনারেশন থেকে, তার পরের জেনারেশন থেকে আরো ট্যাক্স নেয়। আমরা যদি একটা অপরাধের কারণে বিজনেসগুলোকে মেরে ফেলি, তাহলে তো আমরা পরের জেনারেশন রেভিনিউ পাবো না।’
তিনি বলেন, বড় আকারের যারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, তাদের কয়জনকে আমরা ধরতে পেরেছি। সত্যিকার অর্থে তা পারিনি। তবে আমাদের গোয়েন্দারা প্রচুর কাজ করছেন। বড় আকারের যেগুলো ট্যাক্স ফাঁকি হয়েছে, আমরা উদ্ঘাটন করে আদায়ও করছি। এদিক থেকে আমাদের সফলতা ভালো। হয়ত ভবিষ্যতে আপনারা আরো কড়া এনফোর্সমেন্ট দেখবেন।