ঢাকা প্রেস নিউজ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে, মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা হিসেবে ১০০ দিনের কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, "ইলিশ প্রাপ্তি প্রবাসীদের অধিকার," এবং উল্লেখ করেন যে, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেখানে আছেন, সেখানে স্বল্প পরিসরে কিছু ইলিশ পাঠানোর বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বিশেষভাবে, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ ও আমেরিকায় বাংলাদেশিদের উপস্থিতি রয়েছে এবং সেখানে কিছু পরিমাণ ইলিশ পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
এ বছর ইলিশ মাছের আহরণ গত বছরের তুলনায় কম হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এর অন্যতম কারণ ছিল সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া। এছাড়া, ভারত থেকে অবৈধভাবে ট্রলার ফিশিংয়ের মাধ্যমে ইলিশ আহরণের অভিযোগও রয়েছে। তবে, মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং নৌ-পুলিশের সতর্ক অভিযান ফলপ্রসূ হয়েছে এবং বেশ কিছু ভারতীয় ট্রলার ও জেলে আটক করা হয়েছে।
মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে বাজারে ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৫শ’ টাকা থাকায় সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। দাম বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেট, মধ্যস্বত্বভোগী এবং দাদন-ব্যবসাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা, এবং মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মা ইলিশ রক্ষার অভিযান সফল হয়েছে উল্লেখ করে ফরিদা আখতার জানান, ইলিশের ডিম ফোটার হার গড়ে ৫৪ শতাংশ, কোথাও ৭০ শতাংশেরও বেশি হয়েছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় গত তিন মাসে (আগস্ট-অক্টোবর) ১ হাজার ৪২৪টি ইলিশ আহরণকারী জেলে পরিবারের মধ্যে বিকল্প আয়ের উপকরণ (এআইজি) বিতরণ করা হয়েছে, এবং ১ হাজার ৮২৫ জন সুফলভোগী ইলিশ জেলেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা আরও জানান, এবারের অভিযান চলাকালে ১৪ হাজার ১৬৪.১২৫ টন চাল ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৫টি জেলে পরিবারের মাঝে বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৩ হাজার ৯৬২.১ টন চাল ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬০টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে (৯৯ শতাংশ বিতরণের হার)। তিনি আরও জানান, আগামীতে ৪০ কেজি মাসিক ভিজিএফের পরিবর্তে ৫০ কেজি এবং ২৫ কেজির পরিবর্তে ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এবং জেলে তালিকা হালনাগাদ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফরিদা আখতার জানান, দুর্গাপূজার সময় ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলেও, ভারতে গেছে মাত্র ৬৬৫ টন। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ এর আওতায় ২ হাজার ১৬৫টি মোবাইল কোর্ট ও ৯ হাজার ৮০২টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে ৫৪.৮৪ টন ইলিশ জব্দ, ৬১১.৬৩৮ লাখ মিটার জাল আটক, ৩ হাজার ২৫টি মামলা দায়ের, ৭৫.২৭৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ২ হাজার ৯ জনকে জেল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মুন্সিগঞ্জে কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২৪.৯০ লাখ মিটার জাল এবং ৬ হাজার ৬০০ পিস রেইল আটক করা হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং কারখানাগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।