নিলামে উঠল সাবেক ২৪ এমপির বিলাসবহুল গাড়ি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩২ অপরাহ্ণ   |   ৭৯ বার পঠিত
নিলামে উঠল সাবেক ২৪ এমপির বিলাসবহুল গাড়ি

ঢাকা প্রেস নিউজ
 

শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা বাতিল হওয়ার পর, অবশেষে নিলামে তোলা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক ২৪ সংসদ সদস্যের (এমপি) বিলাসবহুল গাড়ি। উচ্চ সিসির এসব গাড়ির বিক্রির অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
 

চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা বিজন কুমার তালুকদার জানান, আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) থেকে ই-অকশনের ওয়েবসাইটে আগ্রহীরা নিলামের ক্যাটালগ দেখতে পারছেন। অনলাইনে দর জমা দেয়ার সময় ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় দরপত্রের বাক্স খোলা হবে।
 

এবার মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে, যার মধ্যে ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাড়িগুলো সরাসরি দেখার সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা। চট্টগ্রাম বন্দর স্টেডিয়ামের বিপরীতে নতুন কার শেডে গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।
 

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, জাপানের তৈরি ২৬টি ল্যান্ড ক্রুজার, পাঁচটি টয়োটা হ্যারিয়ার, দুইটি টয়োটা র‌্যাভ ফোর, একটি টয়োটা এস্কোয়ার এবং চীনের তৈরি হেভি ডিউটি সিনো ডাম্প ট্রাক ১০টি নিলামে তোলা হয়েছে। গাড়িগুলোর মধ্যে ২৪টি ল্যান্ড ক্রুজার একদম নতুন, যা শুল্কমুক্ত সুবিধায় সাবেক এমপিরা এনেছিলেন।
 

দু’দফা চিঠির পরও সাবেক সংসদ সদস্যরা আমদানি করা গাড়ি খালাস করাননি। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা বাতিল হওয়ায়, গত পাঁচ মাসে মাত্র একজন শুল্ক-কর দিয়ে একটি গাড়ি খালাস করেছেন।
 

কাস্টমস সূত্র জানায়, একটি গাড়ি আমদানি করতে সাবেক এমপিরা ৯৫ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন। সব মিলিয়ে, এই ২৪টি গাড়ি আনতে সাবেক এমপিরা প্রায় ২৩ কোটি টাকা খরচ করেছেন, যা আর ফেরত পাবেন না। এখন কাস্টমস গাড়িগুলো নিলামে তুলে যা পাবে, তা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
 

গাড়িগুলোর সংরক্ষিত মূল্য ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম নিলামে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি সর্বোচ্চ দরদাতা গাড়ি কিনতে পারবেন। এ হিসেবে, প্রতিটি গাড়ি কিনতে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা কর দিতে হবে। ২৫ শতাংশ করসহ, গাড়ির সর্বনিম্ন দাম পড়বে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
 

কাস্টমসের তালিকা অনুযায়ী, নিলামে তোলা সবচেয়ে দামি গাড়িটি আমদানি করেছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের গাড়িটির আমদানি মূল্য ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টাকা, এবং শুল্ক-কর প্রায় ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
 

নিলামে উঠা সবচেয়ে কম দামি গাড়িটি এনেছিলেন ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামান। এক বছরের পুরোনো টয়োটা গাড়ির আমদানি মূল্য ছিল ৫৭ হাজার ডলার বা ৬৮ লাখ টাকা, যার শুল্ক-কর আসে ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
 

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান ও জান্নাত আরা হেনরীর টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের দুটি গাড়ি বন্দরে এসে পৌঁছেছিল জুলাইয়ের শেষে। সরকার পতনের পর ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর ১৪ আগস্ট দুজনেই তড়িঘড়ি করে অগ্রিম আয়কর বাবদ ৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা পরিশোধ করে খালাসের উদ্যোগ নেন, তবে সংসদ ভেঙে যাওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টমস তা আটকে দেয়। এই দুই গাড়িও নিলামে তোলা হচ্ছে।
 

নিলামে তোলা গাড়ির তালিকায় আরও রয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, সাদ্দাম হোসেন (পাভেল), নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, আবুল কালাম আজাদ, আবদুল মোতালেব, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, তৌহিদুজ্জামান, শাহ সারোয়ার কবীর, এস এ কে একরামুজ্জামান, এস এম আল মামুন, এস এম কামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, আসাদুজ্জামান ও আখতারউজ্জামান।