ছাত্র আন্দোলনে অভিযুক্ত ‘খুনি অফিসারকে’ এসপি চায় না কুড়িগ্রামবাসী

প্রকাশকালঃ ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২৪ অপরাহ্ণ ৫৭৩ বার পঠিত
ছাত্র আন্দোলনে অভিযুক্ত ‘খুনি অফিসারকে’ এসপি চায় না কুড়িগ্রামবাসী

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

 

কুড়িগ্রামের নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদকে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে কুড়িগ্রামের এসপি হিসেবে বদলি ও পদায়ন করা হয়। তবে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে কুড়িগ্রামে বদলির প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।

 

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদকে কুড়িগ্রামে বদলির আদেশ প্রকাশ হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এই পুলিশ কর্মকর্তা খুলনায় আন্দোলনকারীর ওপর ব্যাপক ‘নির্যাতন’ করেছেন এমন অভিযোগ তুলে তাকে কুড়িগ্রামে পদায়ন না করতে জোর দাবি জানানো হচ্ছে। অবিলম্বে তার বদলি আদেশ বাতিল করে তাকে চাকরি থেকে অপসারণের দাবিও তুলেছেন কেউ কেউ।

 

২৪তম বিসিএসের এই কর্মকর্তার বরখাস্ত দাবি করে কুড়িগ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম শাকিল তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘কুড়িগ্রামে পুলিশ সুপার হিসেবে আসতেছে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। সে একজন খুনি এবং সাইকোপ্যাথ পুলিশ অফিসার। ওর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলুন। এই এসপি কুড়িগ্রামে আমরা চাই না। ওরে পুলিশ বাহিনীতেও চাই না। দ্রুত বরখাস্ত করা হোক।’ একই দাবিতে পোস্ট করেছেন আরও অনেকে।

 

এদিকে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদকে এসপি হিসেবে সুপারিশ করা একটি ডিও (ডামি অফিসিয়াল) লেটার ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, এমপি কর্তৃক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর দেওয়া ওই ডিও লেটারে পুলিশ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদকে ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য’ উল্লেখ করে তাকে প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকা খুলনা অথবা মৌলভীবাজার জেলায় বদলি অথবা পদায়নের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ডিও লেটারটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

 

এসপি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সংগীত শিল্পী তাবিজ ফারুকের একটি পোস্ট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। গত ১৪ আগস্ট দেওয়া পোস্টে তিনি ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে রীতিমত ‘হাটে হাড়ি ভেঙেছেন’। কুড়িগ্রামবাসী অনেকের ফেসবুক ফিডে এখন ওই সংগীত শিল্পীর পোস্টটি ঘুরছে। ‘নতুন স্বাধীনতার’ পর দেওয়া ওই পোস্টে তাবিজ ফারুক লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে খুলনার মেট্রোপলিটন এলাকায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার চালিয়েছে এই সেই কুখ্যাত পুলিশের এসপি পদমর্যাদার রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ (২৪ তম বিসিএসের কর্মকর্তা)।’

 

এসপি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে এই সংগীত শিল্পীর দাবি, ‘অতীতেও এই দুর্নীতিবাজ ও সাইকো পুলিশ অফিসার রিয়াজউদ্দিনের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে এ চাকরির সুবাদে বিভিন্ন নিরীহ ও সাধারণ ছাত্র, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি সাংবাদিকরাও হয়রানির শিকার হন। সেই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষদের হত্যা গুম ও খুনসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে ফাঁসিয়ে দেওয়াই ছিল দৈনিক রুটিন। দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আমেরিকায় তার বোনদের ও আত্মীয়স্বজনের কাছে অবৈধপথে পাচার করেছে। চাকরি থেকে সাসপেন্ডসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি ছাত্রছাত্রী ও বাংলার জনতার পক্ষ থেকে।’

 

এমন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাকে কুড়িগ্রামে এসপি হিসেবে পদায়নের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলার শিক্ষার্থী ও তাদের প্রতিনিধিরা। তারা অবিলম্বে এই এসপির বদলির আদেশ বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, শিক্ষার্থী-জনতার ওপর নির্যাতনকারী ওই পুলিশ অফিসারকে আমরা চাই না। আমাদের আপত্তি উপেক্ষা করে কুড়িগ্রামে তাকে পদায়ন করা হলে এসপি অফিস ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলন হবে। আমরা চাই না শান্ত কুড়িগ্রাম আবারও অশান্ত হোক।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে কুড়িগ্রামে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী অন্যতম সংগঠক মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘ওই এসপি খুলনায় আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করেছেন। তিনি আমাদের ছাত্রদের ওপর নির্যাতন করেছেন। আমরা সেসব প্রমাণ পেয়েছি। আমরা এ রকম নরপিচাশ এবং ছাত্র নির্যাতনকারী ব্যক্তিকে কুড়িগ্রাম জেলায় চাই না। ওনাকে যদি এখানে পদায়ন করা হয় তাহলে এসপি অফিসসহ অন্য সরকারি অফিস ঘেরাও করা হবে।’

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পদায়ন পাওয়া এসপি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মেসেজে লেখেন, ‘আইজিপির সঙ্গে মিটিংয়ে আছি।’ ফলে তাৎক্ষণিক তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

এ বিষয়ে রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি)রশিদুল হক বলেন, ‘নতুন এসপি পদায়ন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার কাছেই জানলাম। যেসব অভিযোগের কথা বললেন, দেখছি আসলে কী বিষয়।’