ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরিচয়হীন একটি গাছ। ডাল পাতায় ঘেরা বিশাল আকৃতির গাছটি রোজ বেড়ে উঠছে অথচ গাছটির কেউ জানে না। এমন গাছের দেখা মিলেছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় ওমর মজিদ ইউনিয়নের জয়দেব হায়াত গ্রামের দর্পণ নারায়নের বাড়িতে।
নির্দিষ্টভাবে গাছটির নাম না জানলেও অচিন গাছ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের ধারণা, অচিন গাছটি ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে। জনমনে তিন পুরুষের সাক্ষী গাছটি নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গাছটির বয়স কমপক্ষে ৫শ বছর। বৃটিশ আমলে অচিন গাছ হিসেবে এর নামকরণ করা হয়। এর আগে গাছটির শাখা-প্রশাখা প্রায় ২০ শতক জমিজুড়ে বিস্তীর্ণ ছিল। গাছের ডালপালার জন্য রোদ পাওয়া যেত না পাশের বাড়িগুলোতে। ফলে প্রতিবেশীরা দূর-দূরান্তে ধান-পাট শুকাতেন। সময়ের পরিবর্তনে গাছটির বর্তমান শাখা- প্রশাখা কমেছে। বর্তমানে গাছটি প্রায় ১০ শতাংশেরও কম জমির আয়তন ঘিরে রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে কখনো গাছটির ডাল ভেঙে পড়ার কথা এলাকার লোকজন জানেন না। গাছটিতে পাইকোর ফলের মতো গোটা গোটা ফল ধরে এবং এসব ফল পশু-পাখি খায়। এ গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়লেও কোনো ফল থেকে নতুন গাছ জন্মায় না। অনেক আগে গাছটিতে বিশাল আকৃতির বিষাক্ত সাপ বসবাস করতো। কিন্তু এসব সাপ মানুষের কোনো ক্ষতি করেনি বলে জানান তারা।
সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাছটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির। প্রতি সন্ধ্যায় পাশের ও দূর-দুরান্তের সনাতন ধর্মের লোকজন আসেন। তারা মানত করে গাছের গোড়ায় পূজা-অর্চনা করেন এবং দান বাক্সে দক্ষিণা দেন। দান বাক্সে লেখা রয়েছে গাছের পাতা কেউ ছিঁড়বেন না।
বর্তমানে গাছটি অযত্ন, অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চারদিক জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়েছে। গাছটির পাতা সবুজ। তবে পাতাগুলো ডুমুর পাতার মতো হলেও খসখসে নয়, মসৃণ। সারা বছর গাছে পাতা দেখতে পাওয়া যায়। পুরনো পাতাগুলো রাতারাতি নতুন পাতায় রূপান্তরিত হয়। এ গাছের পাতার রস সাদা বর্ণের। সারা বছর গাছটি সুশীতল ছায়া দিয়ে থাকে। কালের সাক্ষী হয়ে শাখা- প্রশাখা বিস্তার করে আজো জবুথবুভাবে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। কালের সাক্ষী গাছটির রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে রাজারহাট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছটির গোঁড়া পাকা করে দেওয়ার পর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ২০১৬ সালে গাছটির চারপাশ সৌন্দর্য বর্ধন করে। কিন্তু আধুনিকভাবে সংস্কার না করা আর যত্নের অভাবে সেগুলো নষ্ট হবার পথে। রূপকথার মতো গাছটিকে ঘিরে স্থানীয়দের লোকমুখে নানা গল্পকথা শোনা যায়।
অনেকের ধারণা, বর্তমান ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূপ-কামাখ্যা থেকে আগত একদল জাদুকর গাছটি চোখের পলকে উড়িয়ে এনে বর্তমান স্থানে লাগিয়ে দেন। গাছটির নাম কেউ জানতেন না। তখন থেকেই গাছটি 'অচিন গাছ' নামে পরিচিত। অপর এক পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, কোনো এক অজানা পীর সুদূর পশ্চিম দিক থেকে গাছটির চারা এনে এখানে রোপণ করেছিলেন। সে কারণেই গাছটি কেউ চিনছেন না। তবে গাছটির যে একটি ঐতিহাসিক রহস্য রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গাছটি মরীচি পরিবারের ফিকাস গণভুক্ত একটি গাছ। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ফিকাস ল্যাকর বুক-হাম হিসেবে দাবি করেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মোঃ নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, অচিন গাছটির নাম শুরুতে সবার কাছে অজানা ছিলো। আমি গত ৫-৭ বছর ধরে গাছটির নাম অনুসন্ধান করার জন্য এর নমুনা সংগ্রহ করে নিশ্চিত হই গাছটির নাম রয়েছে। গাছটি মরীচি পরিবারের ফিকাস গণভুক্ত একটি গাছ। গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম ফিকাস ল্যাকর বুক-হাম।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ আল ইমরান বলেন, আমি এই উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি। গাছটির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে সংস্কার প্রয়োজন হলে, তা করা হবে।