আশিক চৌধুরী সিঙ্গাপুরের একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ফাইন্যান্স বিভাগে কর্মরত। তবে ব্যাংকার হলেও শখ ছিল আকাশে উড়বেন। যুক্তরাজ্যে এক বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর হয়ে ওঠেন লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রাইভেট পাইলট। কিন্তু বিমানে চড়েও নয়, তিনি যে উড়তে চেয়েছেন পাখির মতো করে! তাই সবশেষে থাই স্কাই অ্যাডভেঞ্চার নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্জন করেন স্কাইডাইভারের লাইসেন্স। বলা হয়েছিল, এই লাইসেন্স দেখিয়ে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া বিশ্বের যেকোনো দেশে স্কাইডাইভিং করতে পারবেন আশিক। সেই সুযোগটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন বাংলাদেশি এই তরুণ। বিমান চলাচলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে উঁচুতে ওঠে ঝাঁপ দিয়ে আকাশে মেলে ধরেছেন দেশের পতাকা। ভেঙেছেন দুটি বিশ্ব রেকর্ড। এবার তিনি নাম লেখাতে চলেছেন গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।
গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে বিমান থেকে লাফ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালান আশিক। ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দেন তিনি। ৩৭ হাজার ২৯৭ ফুট উচ্চতায় নেমে এসে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা মেলে ধরেন। এরপর ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পতাকা ধরে রাখেন। মাটি থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে থাকা অবস্থায় ভূমিতে অবতরণের জন্য প্যারাসুট খোলেন। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের 'লংগেস্ট আউটডোর ফ্ল্যাট ফ্রিফল' এবং 'গ্রেটেস্ট ডিসটেনস ফ্রিফল উইথ আ ব্যানার অর ফ্ল্যাগ' নামক দুটি রেকর্ডের ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন আশিক। শিগগিরই তিনি আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।
যশোরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা আশিকের মাথায় আকাশে ওড়ার স্বপ্ন আসে মূলত বিমানবাহিনীর পাইলট বাবার কাছ থেকে। আশিকের বাবা এয়ার কমোডর (অব.) একেএম হারুন চৌধুরী সিভিল এভিয়েশনের অথোরিটির সাবেক চেয়ারম্যান। ছেলের সাফল্যে তিনি গর্বিত। ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০বার স্কাইডাইভিং করেছেন আশিক। বাবার পাশাপাশি মা মাহমুদা পারভীনও তাঁকে সবসময় উৎসাহ যুগিয়েছেন। মামা ড. এটিএম তারিকুজ্জামানও প্রেরণা হয়ে পাশে ছিলেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, 'আকাশে বিমান থেকে ঝাঁপ দিয়ে নামার সময় পাখির চোখে পৃথিবীকে দেখার মতো মুক্ত এক অনুভূতি কাজ করে। এর আগে বিশ্বে আরও কয়েকজন এমন উচ্চতা বা আরও খানিকটা বেশি উচ্চতা থেকে স্কাইডাইভিং করেছেন। কিন্তু দেশের পতাকা সঙ্গে নিয়ে এটিই প্রথম। ৪১ হাজার ফুট থেকে নেমে আসতে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়। সফলভাবে এই অভিযান শেষ করতে পেরে খুব নির্ভার লাগছে, দেশের জন্য বড় দুটি বিশ্বরেকর্ডে নাম লেখাতে পারব বলে আশা রাখছি।' আশিকের এই দুঃসাহসী যাত্রায় স্পন্সর হিসেবে সঙ্গে ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি।