রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পেয়েছে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানায়, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আলোচনার পর ভারতীয় শোধনাগারগুলো রুশ তেল আমদানি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
তবে ভারতীয় শিল্পসূত্রগুলো বলছে, নয়াদিল্লি এখনো পর্যন্ত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানোর কোনো নির্দেশ দেয়নি। বরং নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের জন্য যে তেলবাহী জাহাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যথাসময়ে পৌঁছাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। ফলে বাস্তবে আমদানিতে উল্লেখযোগ্য কোনো হ্রাস দেখা যাচ্ছে না।
এর আগে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রুশ তেল আমদানি বন্ধের অঙ্গীকার করেছেন। তবে ভারতীয় সূত্রগুলোর দাবি—তারা এ মুহূর্তে এমন কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি। রাশিয়ার জ্বালানি তথ্য সংস্থা কেপিএলআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসেই ভারতের রুশ তেল আমদানি ২০ শতাংশ বেড়ে দৈনিক প্রায় ১.৯ মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছাবে।
অন্যদিকে, ভারত ও চীন যদি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে দেয়, তাহলে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশিয়া দৈনিক প্রায় ৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন করে। এই বিপুল পরিমাণ তেল হঠাৎ করে বাজার থেকে হারিয়ে গেলে বা বিকল্প উৎসে সরিয়ে নেওয়া হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, তেলের দাম বর্তমানে ব্যারেলপ্রতি ৫৮ ডলার হলেও তা বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা বিশ্বেই মুদ্রাস্ফীতি চরম আকার ধারণ করবে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের হিসাব অনুযায়ী, তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ১০ ডলার বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি গড়ে আরও ০.২ শতাংশ বেড়ে যায়।
অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহে তেল রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ভারত ও চীন তেল কেনা বন্ধ করলে মস্কোর রাজস্ব প্রবাহে বড় ধাক্কা লাগবে, যা তাদের যুদ্ধ অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার তেল আমদানিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হলে তার অভিঘাত কেবল রাশিয়া বা ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—বরং পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতি এক নতুন অস্থিতিশীলতার মুখে পড়বে।