বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেফতার ও তার ভক্ত–অনুরাগীদের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছি। সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, যারা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে অংশ নিতে গিয়েছিল, তাদের ওপর একটি গোষ্ঠী হামলা চালিয়েছে এবং নাগরিকদের রক্তাক্ত করেছে। স্থানীয় পুলিশ হামলাকারীদের হাত থেকে ভক্ত–অনুরাগীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর 'তৌহিদি জনতা' নামের কিছু গোষ্ঠী ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নিজেদের হাতে আইন চালাচ্ছে। মানিকগঞ্জে এই হামলা শুধু বাউল ও তাদের সমর্থকদের ওপর সীমাবদ্ধ নয়, এটি সমগ্র নাগরিক নিরাপত্তার ওপর আঘাত। হামলাকারীদের ছবি, নাম ও রাজনৈতিক পরিচয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে; ফলে তাদের ‘দায়মুক্তি’ দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার যদি এই চিহ্নিত গোষ্ঠীকে ছেড়ে দেয়, তবে তা ব্যর্থতার প্রমাণ হবে।
তারা আরও উল্লেখ করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বহু বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাচ্ছে বলে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু বাউলদের ওপর হামলা, উসকানিমূলক মিছিল, প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি এবং আবুল সরকারের মুক্তি না পাওয়া দেখাচ্ছে, সরকারের এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা রয়েছে।
নাগরিক সমাজ নিম্নলিখিত দাবি জানিয়েছে:
১. সারাদেশে, বিশেষ করে মানিকগঞ্জে, বাউলশিল্পী ও তাদের আয়োজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২. হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পরিবর্তন করতে হবে।
৩. ধর্মীয় অনুভূতির নামে উসকানি ও হামলা বন্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে দৃশ্যমান ও ন্যায্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. 'ধর্ম অবমাননা'র অভিযোগে আটক আবুল সরকারের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে এবং বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। এই ধরনের মামলার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৫. অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে, দেশের বাউল, শিল্পী, লেখক, একাডেমিক, সাংবাদিকসহ সব নাগরিকের বাক্স্বাধীনতা, গান, লেখা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষা করবে।