লোহাগাড়ায় তিন খালের ভয়াবহ ভাঙন, প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ৩১ মে ২০২৫ ০৪:২৯ অপরাহ্ণ   |   ৯৮ বার পঠিত
লোহাগাড়ায় তিন খালের ভয়াবহ ভাঙন, প্লাবিত হচ্ছে লোকালয়

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:-

 

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ডলু, হাতিয়া ও হাঙর খালের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে খালের পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে, সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা—বসতভিটা হারানোর আতঙ্কে অনেকেই রাত কাটাচ্ছেন নির্ঘুম।
 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আধুনগর সরদনী পাড়ায় ডলু খালের তীরঘেঁষা গারাঙ্গিয়া-রশিদিয়া সড়কের বড় একটি অংশ ভেঙে গেছে। এই সড়কটি আধুনগর বাজার থেকে মছদিয়া হয়ে আলুরঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিদিন প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে সওদাগর পাড়া, সিপাহী পাড়া ও মছদিয়া বড়ুয়া পাড়ায় যাতায়াত করেন।
 

অন্যদিকে, আধুনগর ইউনিয়নের রুস্তমের পাড়া সড়কের মঞ্জুরের দোকানের উত্তর পাশে, দক্ষিণ আধুনগরের হিন্দু পাড়া ও সিকদার পাড়ায় হাতিয়া খালে নতুন ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ডলু খালের সরদনী পাড়া, হাঙর খালের ফরিয়াদিরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ও ধলিবিলা আইজানি বাপের পাড়ায় পুরনো ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। এতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে এসব এলাকার ঘরবাড়ি।
 

উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের ছুটার পাড়া এলাকায় ডলু খালের পাড়ঘেঁষে চলাচলের রাস্তা ভেঙে পড়েছে। প্রবল বর্ষণে ডলু খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে খালের পাড় ও সড়ক ভাঙতে শুরু করেছে। এতে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারণ।
 

বয়োবৃদ্ধ আবুল হাশেম বলেন, “গত তিন-চার বছর ধরে লোহাগাড়ার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে, কিন্তু এবারের ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খাল থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণে এর গভীরতা বেড়েছে, ফলে খালের তীর ও ঘরবাড়ি এখন খালের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।”
 

বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এর ফলে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোহাগাড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. রফিকুল ইসলাম খান জানান, “প্রায় ২০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি পড়ে গেছে এবং গাছের ডালপালা পড়ে বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতের কাজ চলছে, দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।”
 

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাছির উদ্দিন জানান, ধলিবিলা এলাকায় হাঙর খালের ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ফলে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ৭–৮টি বসতঘর ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ফরিয়াদিরকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে মুন্সির পাড়া, সিকদার পাড়া, দরগা মুড়া ও নিজতালুক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 

আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন, “টানা বৃষ্টিতে হাতিয়া খালে নতুন করে তিনটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। রুস্তমের পাড়া সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।”
 

এছাড়া লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ, সদর, পুটিবিলা, কলাউজান, চুনতি, পদুয়া, চরখা ও বড়হাতিয়া ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডলু, টংকাবতী, হাঙর, হাতিয়া, কলপাগলি, বোয়ালিয়া, থমথমিয়া ও সুখছড়ি খালের পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব খালের পাড় ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয়রা।