সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ যাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ টয়লেট পরিচালনা শিখতে

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:০১ অপরাহ্ণ   |   ৪৮ বার পঠিত
সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ যাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ টয়লেট পরিচালনা শিখতে

স্থানীয় সরকার বিভাগের তিন কর্মকর্তা নতুন পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট (ভিআইপি) পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিতে চীনে যাচ্ছেন।
 

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত সরকারি আদেশ (জিও) অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ফারুক হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সহকারী প্রোকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং উপসহকারী প্রোকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে সাতদিনের জন্য চীনে থাকবেন।
 

এই ভ্রমণের সমস্ত ব্যয় বহন করবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শ্যাংডং কিউয়ানবাই ইন্টেলিজেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।
 

সরকারি আদেশে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা দায়িত্বের অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরে নির্দেশ দিয়েছে, কোনো ঠিকাদার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ করা উচিত নয়।
 

তবে, মোবাইল টয়লেট ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি পরিচালনা প্রশিক্ষণের নামে স্থানীয় সরকার বিভাগের এই ধরনের বিদেশ ভ্রমণ ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠিকাদার বা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ে বিদেশ ভ্রমণ অনৈতিক এবং স্বার্থসংঘাত সৃষ্টি করে।
 

এর আগেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিদেশ সফরের ঘটনা নতুন নয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ, পরিকল্পনা কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), আইএমইডি ও অন্যান্য সংস্থার অন্তত ৩৫ কর্মকর্তা ঠিকাদার বা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ে বিদেশে ভ্রমণ করেছেন।
 

প্রায়শই এই ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হয় নতুন যন্ত্রপাতি, ট্রেইলার, চেইন ডেজার বা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রশিক্ষণ বা ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের নামে।
 

সরকারের বিধিনিষেধ অনুযায়ী, জরুরি জাতীয় স্বার্থ ছাড়া কর্মকর্তারা একসাথে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না, আর সরকারি অর্থে ভ্রমণ হলে তা ন্যূনতম ও অপরিহার্য হতে হবে। কিন্তু আদেশে দেখা যায়, ঠিকাদার বা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ে কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ, ফ্যাক্টরি টেস্ট বা পরিদর্শনের নামে বিদেশ সফর করছেন।
 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ কমাতে নির্দেশনা থাকলেও এর ব্যত্যয় হচ্ছে। ঠিকাদার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ে ভ্রমণ অনৈতিক এবং এতে কর্মকর্তাদের ওপর ওই প্রতিষ্ঠানের আনুগত্য তৈরি হয়। এতে মানসম্মত পণ্য ও সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রভাবিত হয়।”
 

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, “বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় চাকরিবিধির পরিপন্থী।”