কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তায় দখলদারিত্ব-অগত্যা গাছতলায় চলছে পাঠদান

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৯ অপরাহ্ণ   |   ৩৬ বার পঠিত
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তায় দখলদারিত্ব-অগত্যা গাছতলায় চলছে পাঠদান

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের পূর্ব চর পাত্রখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা পাঁচ বছর ধরে দখল হয়ে বন্ধ রয়েছে। বারবার প্রশাসনকে অবহিত করেও সমাধান না হওয়ায় শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে সড়কের ধারে গাছতলায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন।
 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক ও ১০৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ওয়াবদা খালের বাঁধ দিয়েই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। কিন্তু ওই পথের ওপর সরকারি খাসজমিতে স্থাপনা নির্মাণের পর থেকে এখন আর বিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ নেই।
 

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক শাহ্ আলম বলেন, “১৯৮৮ সালে স্থানীয় শিক্ষা অনুরাগীদের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৩ সালে এটি সরকারি করণ করা হয়। কিন্তু শুরু থেকেই যে পথ দিয়ে আমরা বিদ্যালয়ে যেতাম, সেটি এখন দখল হয়ে গেছে।”
 

তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের জমিদাতা ছিলেন সাবেক ইউপি সদস্য মো. সেকেন্দার আলী, যিনি বিদ্যালয়ের নামে ৩৫ শতাংশ জমি দান করেন। বিদ্যালয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল ৩১৩৫ ও ৩১৩৬ দাগের ওপর ওয়াবদা খালের বাঁধ। এর মধ্যে ৩১৩৬ দাগ ছিল সরকারি খাসজমি। ২০১৬ সালে অষ্টমীর চর এলাকার জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে ৩১৩৬ দাগে ১৫ শতাংশ ও ৩১৩৭ দাগে ২১ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত নেন। অভিযোগ রয়েছে, তার শ্যালক কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ইউএনও মো. মাইদুল ইসলামের প্রভাব কাজে লাগিয়ে বন্দোবস্ত ছাড়া ৩১৩৫ দাগও দখল করে বসতি স্থাপন করেন, ফলে বিদ্যালয়ের রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
 

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. সুমাইয়া খাতুন বলেন, “রাস্তা না থাকায় পাশের বাড়ির ভেতর দিয়ে আসতে হয়। বাড়ির পাশে বড় গর্ত আছে, অনেকেই ভয় পেয়ে স্কুলে আসে না।” আরেক শিক্ষার্থী মোছা. সুম্মা জানান, “লম্বা দিন ধরে আমাদের রাস্তা নাই। মানুষের বাড়ির ভিতর দিয়ে আসতে গেলে বকা শুনতে হয়। আজ ম্যামরা গাছতলায় পড়াচ্ছেন, কষ্ট হলেও উপায় নাই।”
 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রিয়াদ বিন রানু বলেন, “স্বাভাবিক যাতায়াতপথ না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দ্রুত রাস্তার ব্যবস্থা হলে আমরা আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারবো।”
 

জমির বর্তমান দখলদার মো. জাহাঙ্গীর আলম সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা রাস্তা বন্ধ করিনি। রাস্তার জন্য বরাদ্দ এলে প্রয়োজনে জায়গা ছাড়বো।”
 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মনসুর আলী বলেন, “সরকারি জায়গা বন্দোবস্ত নিয়ে বিদ্যালয়ের রাস্তা বন্ধ করা দুঃসাহসিক কাজ।”
 

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক জানান, “বিদ্যালয়ের রাস্তা নিয়ে তদন্ত হয়েছে। সরেজমিন রিপোর্ট পাওয়া গেছে, দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”