‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ — লালনের স্মরণে কুষ্টিয়ায় ভাবের হাটে ভক্তদের মিলনমেলা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ০১:৪৯ অপরাহ্ণ   |   ৩১ বার পঠিত
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ — লালনের স্মরণে কুষ্টিয়ায় ভাবের হাটে ভক্তদের মিলনমেলা

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’— লালন ফকিরের এই আধ্যাত্মিক বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করে জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণের ভেদ ভুলে হাজারো লালনভক্ত ও অনুসারী জড়ো হয়েছেন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়িতে। আত্মজ্ঞান ও মানবতার সন্ধানে তাঁরা নিমগ্ন হয়েছেন সাধুসঙ্গে, গান ও ভাবনায় খুঁজছেন সহজ মানুষের দর্শন।
 

শনিবার (১৮ অক্টোবর) চলছে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসবের দ্বিতীয় দিন। গত রাতে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকেই একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো ভবের হাট। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত গানের আসর, বাউল ভাবগান ও লালনের বাণী উচ্চারণে মেতে আছেন ভক্তরা।
 

১৩৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত এই লালন স্মরণোৎসব শুরু হয় ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিকে, লালন ফকির দেহত্যাগের পর। প্রথমে তাঁর শিষ্য ও ভক্তরা এটি শুরু করলেও এখন এ উৎসবের আয়োজনে যুক্ত হয়েছে লালন একাডেমি। সময়ের সঙ্গে এটি একটি আধ্যাত্মিক উৎসব থেকে পরিণত হয়েছে জাতীয় স্মরণোৎসবে। এবারের উৎসবটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
 

উৎসবে দেশি-বিদেশি বাউল, ফকির ও লালন অনুসারীদের ঢল নেমেছে। আখড়াবাড়িতে তাঁরা অবস্থান নিয়ে গান, ধ্যান ও ভজনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির সাধনায় মগ্ন রয়েছেন। ভক্তদের বিশ্বাস, সাধুসঙ্গে ও মানবসেবার মধ্য দিয়েই মন থেকে হিংসা-রাগ দূর করে সত্যিকারের ‘সোনার মানুষ’ হওয়া সম্ভব।
 

আখড়াবাড়ির ভেতরে ছোট ছোট সাধু আস্তানায় দিনরাত চলছে গান ও দর্শনচর্চা। আর বাইরে মূল মঞ্চে লালনের জীবন ও ভাবধারা নিয়ে আলোচনা ও সংগীতানুষ্ঠান চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। লালন একাডেমির মাঠে জমেছে বাউল মেলা, যেখানে বাউল-ফকিরদের ভাবসংগীত আর দর্শনার্থীদের মিলনে রূপ নিয়েছে এক মহা সম্মিলনিতে।
 

উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, “লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে, যেন নির্বিঘ্নে উৎসব সম্পন্ন হয়।”
 

আগামী ১৯ অক্টোবর শেষ হবে এই তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। ভক্তদের প্রত্যাশা—লালনের বাণী ও মানবতাবাদী দর্শন যদি সবার জীবনে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবেই সার্থক হবে এই আয়োজন।