নতুন বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে, চীনের বার্তা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৪৬ অপরাহ্ণ   |   ৩৫ বার পঠিত
নতুন বিশ্বব্যবস্থা কেমন হবে, চীনের বার্তা

চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মঞ্চে সবার নজর কাড়লেন মাত্র দুজন বিশ্বনেতা—রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। তাদের সঙ্গে স্বাগতিক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে নিজ নিজ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।
 

সামরিক প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয় বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক তিয়েনআনমেন স্কয়ারে—যেখানে ১৯৮৯ সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের ওপর রক্তাক্ত হামলা চালানো হয়েছিল। এবার সেখানে আয়োজন করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিপক্ষে চীনের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে কুচকাওয়াজ।
 

সামরিক শক্তির প্রদর্শন

চীন অনুষ্ঠানে তুলে ধরে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম—হাইপারসনিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, পানির নিচে চলাচলক্ষম ড্রোন, যুদ্ধবিমান, সতর্কতা বিমান, বিমান জ্যামিং সিস্টেম ও দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র। এতে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়, দেশটি নতুন বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে প্রস্তুত।
 

নতুন বিশ্বব্যবস্থা ও বার্তা

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, শি জিনপিংয়ের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার যুগ শেষের পথে। এখন চীন একটি নতুন বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিতে চায়—যা ত্বরান্বিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত পররাষ্ট্রনীতির কারণে।
 

সিঙ্গাপুরের বিশ্লেষক ইয়ান চং আল জাজিরাকে বলেন, এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ছিল চীনকে একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে তুলে ধরা এবং বোঝানো যে অনেক দেশই আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে ভয় পাচ্ছে না।
 

শি জিনপিং নিজেও ঘোষণা দেন—“চীনারা একটি মহান জাতি, তারা কোনো স্বৈরাচারকে ভয় করে না, বরং নিজেদের শক্তিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে জানে।”
 

তিনি লাল রঙের ছাদখোলা লিমুজিনে সৈন্যদের অভিবাদন জানান। সেনারা একসঙ্গে স্লোগান দেন—“পার্টির নেতৃত্ব অনুসরণ করো, জয়ের জন্য লড়ো।” এরপরই শুরু হয় ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যান প্রদর্শন।
 

পুতিন ও কিমের উপস্থিতির তাৎপর্য

অনুষ্ঠানে পুতিন ও কিম জং উনের উপস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের অংশগ্রহণ সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ। অন্যদিকে কোরিয়ান যুদ্ধ চীন ও উত্তর কোরিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে।
 

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরোধিতা করতে চীন-রাশিয়া তাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এভাবে তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পশ্চিমা প্রভাবের বিপক্ষে দাঁড় করাতে চাইছে।
 

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

চীনের সামরিক প্রদর্শনী ও পুতিন-কিমের উপস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিল, অথচ আজ চীন সেই স্মৃতি ভুলে গেছে।
 

ট্রাম্প আরও যোগ করেন—“আপনারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তখন দয়া করে পুতিন ও কিমকে আমার শুভেচ্ছা জানাবেন।”

 

বিশ্লেষকদের মতে, এবারের সামরিক কুচকাওয়াজ শুধু ইতিহাস স্মরণ নয়, বরং পশ্চিমাদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা—চীন আর থেমে নেই। তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন এক শক্তির উত্থান ঘোষণা করছে।