কাপ্তাই হ্রদে পানিস্বল্পতায় কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

প্রকাশকালঃ ০৭ জুন ২০২৩ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ ১৪৮ বার পঠিত
কাপ্তাই হ্রদে পানিস্বল্পতায় কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাই হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে পানির তীব্র সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং প্রচণ্ড দাবদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে কোনো রকমে মাত্র একটি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

এদিকে পানি কমে যাওয়ায় ফলে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে, আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।’


তিনি বলেন, ‘হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোট তো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে।

একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে আছি।’


গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।


পানির অভাবে কেন্দ্রের সব কয়টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরো জানান, কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রয়েছে। এই ইউনিট থেকে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, ‘বছরের এই সময়ে কখনোই পানি এত নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।’


কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল)। রুলকার্ভ অনুযায়ী এ সময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।

সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, অনাবৃষ্টি, বন উজাড় হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে।

এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারি বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে, তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।