ঢাকা প্রেস
মো:সিরাজুল ইসলাম পলাশ,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:-
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবী গ্রামে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন নরেন চন্দ্র রায় (৬৫)।
উপজেলার তুষভান্ডার বাজারে একটি দোকানে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে নরেন চন্দ্র রায় আর এসব বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে সাহায্য করেন তার ছেলে বাদল চন্দ্র (৩০)। আধুনিকতার যুগে এখনও বাপ দাদার এই পেশাকে আগলে রেখেছেন বাবা ও ছেলে।
নরেন চন্দ্র রায়ের দোকানে বিভিন্ন দামের, বিভিন্ন ধরনের চামড়ার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে, মৃদঙ্গ সাড়ে ৩ হাজার টাকা, ঢাক ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা, ঢোল ৬ হাজার টাকা, তবলা ৪ হাজার টাকা ও তবলা বায়া ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। একেকটি বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে সময় লাগে ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও তবলার বেচা-বিক্রি ছিল বেশি। তখন প্রতিদিনই কাজের অর্ডার থাকত। অর্ডার দিয়ে বাদ্যযন্ত্র কিনতেন ক্রেতারা। কিন্তু বর্তমানে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের অধিকাংশই মুখ থুবড়ে পড়েছে ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের কাছে। যার ফলে এই শিল্পের কারিগরদের কদরও অনেক কমে গেছে।
জীবিকা নির্বাহের জন্য অনেক কারিগরই বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। একটা সময়ে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাত্রাপালা, লোকসংগীত, নাটক ও পালাগান ছিল বাংলার ঐতিহ্য। এসব অনুষ্ঠানকে মনোমুগ্ধকর করে তুলতে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তবলা, ঢোল, মৃদঙ্গ, ঢোলক, ডাক, তবল ও বায়ার মতো দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো শোভা পেত বাংলার গ্রামে গ্রামে। কিন্তু আধুনিকতা আর ইলেক্ট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রভাবে দেশীয় এসব বাদ্যযন্ত্র ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসলেও হার মানতে নারাজ দেশি বাদ্যযন্ত্রের নিপুণ কারিগর সহদেব চন্দ্র দাস। অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিলেও সহদেব বাপ-দাদার পেশাটিকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।
সুনিপুণ হাতে প্রতিনিয়িত দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ করে চলেছেন তিনি। এই কাজে সঙ্গে রেখেছেন নিজের ছেলেকে। বাবা-ছেলের কঠোর পরিশ্রম থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই কোনোরকমে চলে সংসারের চাকা।
বাদ্যযন্ত্র কারিগর নরেন চন্দ্র রায় বলেন, বাপ-দাদার আমলে এ পেশা ছিল খুবই জনপ্রিয়। এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো অনুষ্ঠান হলে এসব যন্ত্রের প্রচলন ছিল বেশি। বর্তমানে অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় এবং আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কারণে কমে যাচ্ছে হাতের তৈরি এসব বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা। পেশা টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বয়স হয়ে যাওয়ায় এসব কাজে এখন আর বেশি সময় দেই না। তাই ছেলেকে নিয়োজিত রেখেছি এই পেশায়। এখন আমার ছেলে সকল বাদ্যযন্ত্র তৈরির অর্ডার নেয়। আমি সময় পেলে সাথে সময় দেই।
নরেন চন্দ্র রায়ের ছেলে বাদল চন্দ্র বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই দেখে আসছি তিনি এ পেশার সাথে জড়িত। এসব বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চলছে। বাবার বেশি বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মত কাজ করতে পারে না। তাই আমাকেই সব সামলাতে হচ্ছে। দিনদিন কমে যাচ্ছে এসব যন্ত্রের চাহিদা। তাই দেশীয় বাদ্যযন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।