খুলনা জেলা প্রতিনিধি:-
মানব পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া এ দুজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আইনজীবী, আদালত ও কারা কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় জামিনের আদেশের মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে তারা মুক্তি পান। আদালত তাদের জামিনের বেলবন্ডও মওকুফ করেন।
মুক্তির পর শাহজাদীর ১৩ দিনের নবজাতককে খুলনা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়।
শাহজাদীর আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার মহানগর দায়রা আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে সমকালের প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করা হয়। বিচারক মো. শরীফ হোসেন হায়দার সঙ্গে সঙ্গে জামিন মঞ্জুর করেন এবং দ্রুত আদেশটি কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তিনি ভুক্তভোগীদের আর্থিক সংকট বিবেচনায় বেলবন্ডও মওকুফ করেন। ছয়টি বেলবন্ডের জন্য অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা খরচ হতো।
তিনি আরও জানান, শুনানিকালে বিচারক মন্তব্য করেন—আইনে যাই থাকুক না কেন, ডকট্রিন অব নেসেসিটি বিবেচনায় নিচের আদালতেই এই মায়ের জামিন দেওয়া উচিত ছিল।
খুলনা কারাগারের জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে জামিনের কাগজ হাতে আসে। নার্গিস বেগমকে কিছুটা মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীর উপস্থিতিতে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে শাহজাদী, তার মা ও নবজাতককে মুক্তি দিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কারামুক্তির পর আবেগাপ্লুত হয়ে বাদী মির্জা সুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন শাহজাদী। তিনি বলেন, ‘চার মেয়ে নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আল্লাহকে কখনো দোষ দেইনি। মায়ের মাথা ঠিক নেই, তিনি না বুঝেই ফারহানকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন।’
বাদী মির্জা সুজনও আবেগঘন কণ্ঠে জানান, তিনি মামলা আর চালাবেন না এবং শাহজাদীকে ক্ষমা চান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলে আর শাহজাদী আপার মেয়ে একই দিনে জন্ম নেয়। আমার ছেলের বুকের দুধের অভাব হলে আপা তার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলেকেও দুধ খাওয়ান। ওই দিনই ফারহানকে কোলে নিয়ে নিচে নামেন তিনি। পরে হঠাৎ দেখি সন্তান নেই। দিশেহারা হয়ে মামলা করি। পরে বুঝতে পারি, চাপের মুখে শাহজাদীর মা-ই শিশুটিকে নিয়ে যান।’
তবে আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান জানান, মানব পাচার মামলা আপোসযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত ও সবার পরামর্শ প্রয়োজন। শিশুর অসুস্থতার কারণে ২৫ সেপ্টেম্বরের শুনানির তারিখ পরিবর্তন করে আদালত ২০ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন।
প্রসঙ্গত, বাগেরহাটের রামপালের সিরাজুল ইসলাম ও ফকিরহাটের মেয়ে শাহজাদীর সংসারে চার কন্যা সন্তান রয়েছে। আবারও অন্তঃসত্ত্বা হলে ছেলেসন্তানের জন্য পরিবার থেকে প্রবল চাপ দেওয়া হয়। কন্যা হলে বিবাহবিচ্ছেদের হুমকিও দেন স্বামী। এ অবস্থায় ১১ সেপ্টেম্বর রাতে শাহজাদী সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন। খবর শুনেই স্বামী হাসপাতাল ত্যাগ করেন এবং আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি।
চরম মানসিক চাপে পড়া শাহজাদীর মা নার্গিস বেগম ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে একই হাসপাতালে জন্ম নেওয়া এক নবজাতক পুত্র সন্তান চুরি করেন। দ্রুত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও পুলিশের তৎপরতায় সেই সন্ধ্যায় নবজাতকটি উদ্ধার হয় এবং নার্গিস বেগমকে আটক করা হয়। এরপর নবজাতকের বাবা মির্জা সুজন মানব পাচার আইনে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় শাহজাদী ও তার মাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। নার্গিস বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়, আর শাহজাদী পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ২১ সেপ্টেম্বর তাকে শিশুসহ কারাগারে নেওয়া হয়। অবশেষে মঙ্গলবার মা ও মেয়ে দুজনই মুক্তি পেলেন।