গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংসের দিকে

প্রকাশকালঃ ২৬ অক্টোবর ২০২৩ ০২:১২ অপরাহ্ণ ২৫০ বার পঠিত
গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংসের দিকে

সরাইলি বোমায় বিধ্বস্ত গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যে হাসপাতালে এসে মানুষ চিকিৎসা নেয়, সেই হাসপাতালই এখন আইসিইউতে। নির্বিচারে বোমা বর্ষণ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ৭৫৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৪ জনই শিশু। মহাসচিবের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘকে শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলি বোমায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়ালেও এখনই যুদ্ধবিরতির পক্ষে নন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ইসরাইলি বোমা হামলায় গাজায় আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হলেও পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী আচরণের সমালোচনা করেছেন জর্ডানের রানি।


হাসপাতালই আইসিইউতে
গাজার হাসপাতালই এখন আইসিইউতে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংসের দিকে। এখানে হাসপাতালগুলো আর কোনো কাজ করছে না। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, জনবল এবং জ্বালানি নেই। বোমা বর্ষণের কারণে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয় কিছুই নেই। তিনি ধ্বংসের মুখে থাকা স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, এর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হাসপাতালের পরিস্থিতি জানালেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেই এখন গাজাবাসীকে মৃত্যুর পথে যাত্রা করতে হবে। মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭০৪ জনই শিশু। একদিনেই নিহত হয়েছে ৭৫৬ জন যার মধ্যে ৩৪৪ জনই শিশু। ১৭ হাজার ৪৩৯ জন আহত হয়েছে। গণকবর এড়াতে পরিবারের সদস্যদের হাতে ব্রেসলেট পরিয়ে দিচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা। যাতে করে, ইসরাইলি হামলায় মারা যাওয়ার পর প্রিয়জনদের শনাক্ত করতে পারেন তারা।

জাতিসংঘের হিসাবে, গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। বাস্তুচ্যুত অনেকে গাজার হাসপাতালগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের ভিড়ে উপচে পড়ছে হাসপাতাল।

জাতিসংঘকে শিক্ষা দেবে ইসরাইল : হামাসকে নিয়ে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মন্তব্যকে ঘিরে জাতিসংঘকে একটা শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি দূত গিলাদ এরদান একটি আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, মহাসচিবের মন্তব্যের জন্য আমরা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করব। ইতিমধ্যে আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিতসের ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছি। তিনি বলেন, এখন সময় জাতিসংঘকে শিক্ষা দেওয়ার। এদিকে গতকাল জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেছেন, নিরাপত্তার পরিষদে তার দেওয়া বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন।


এদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, ১৮ দিন ধরে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। সেই সঙ্গে পুরোপুরি অবরোধ করে রাখা হয়েছে এই ভূখণ্ড। এ পরিস্থিতির মধ্যে গাজার লাখো মানুষের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানিসংকট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, ‘যদি জরুরিভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ করা না হয়, তাহলে আমরা গাজায় আমাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হব।’

যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করে না ব্রিটেন : ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার পক্ষে ব্রিটেন। তবে এখনই যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করা ঠিক হবে না। কারণ এতে হামাস সুবিধা পাবে। গতকাল বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধী লেবার পার্টির এক এমপি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন।


পশ্চিমাদের সমালোচনায় জর্ডানের রানি :অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে এবার ‘চরম দ্বিচারিতার’ অভিযোগ তুলেছেন জর্ডানের রানি রানিয়া আল আবদুল্লাহ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি এই অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার প্রচারিত ঐ সাক্ষাতকারে রানি বলেছেন, বর্তমান বিশ্বে এমন দ্বিমুখী আচরণ খুবই হতাশাজনক।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান যুবরাজের :গাজা তথা ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নৃশংস সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে ফোন করেন। এ সময় যুবরাজ ঐ আহ্বান জানান।

যা বললেন ব্লিনকেন :হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া বন্ধে চীনের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তিনি বলেছেন, গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ যাতে আরও ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে কাজ করবেন। নিরাপত্তা পরিষদে ব্লিনকেন বলেন, এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া রোধে বিশেষ দায়িত্ব আছে নিরাপত্তা পরিষদের এবং এর স্থায়ী সদস্যদের। এজন্য চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি।


স্থল অভিযান করলে ভুল করবে ইসরাইল : ম্যাক্রঁ :এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেছেন, গাজায় বড় স্থল অভিযান করলে ইসরাইল ভুল করবে। ইসরাইলকে স্থল আক্রমণ পুনর্বিবেচনা করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। মিশরের কায়রোতে আল-সিসির সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ম্যাক্রঁ বলেছেন, তার দেশ দ্বৈত নীতি অনুশীলন করে না। এদিকে মিশরের প্রেসিডেন্ট ফাত্তাহ আল-সিসি গাজায় ইসরাইলি স্থল আক্রমণ এড়াতে পদক্ষেপ নিতে ফ্রান্সকে আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গতকালও বলেছেন, স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার সেনাবাহিনী।

ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইল :গাজার সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ইসরাইল ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম। অক্সফাম গাজার পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বর্ণনা করে বলেছে, গাজায় লক্ষাধিক সাধারণ মানুষকে বিশ্ব সম্মিলিতভাবে শাস্তি দিচ্ছে। অক্সফাম এক বিবৃতিতে বলেছে, যুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষুধা বা অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব নেতারা বসে থাকতে পারেন না। তারা এ অবস্থা শুধু দেখে যেতে পারে না। এ পরিস্থিতি নিরসনে তাদের কাজ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাদের কাজ করতে হবে।