বর্ষা-মাহিরের প্রেমের বলি জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ!

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১২:০৩ অপরাহ্ণ   |   ২৮ বার পঠিত
বর্ষা-মাহিরের প্রেমের বলি জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জুবায়েদ হোসাইনের হত্যাকাণ্ডে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রেমঘটিত সম্পর্কের জটিলতাই এই হত্যার মূল কারণ।
 

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা ও তার বয়ফ্রেন্ড মাহির রহমানের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের জেরেই ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড। তবে ঘটনার পরিকল্পনা বা বাস্তবায়নের বিষয়ে বর্ষা কিছুই জানতেন না বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি।
 

ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “বর্ষা ও মাহিরের নয় বছরের সম্পর্ক ছিল। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হওয়া এই দুইজনের প্রেম শুরু হয় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়। বর্তমানে মাহির বুরহানউদ্দিন কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং বর্ষা ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। সম্প্রতি তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয় এবং কিছুদিন আগে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর বর্ষা মাহিরকে জানায়, সে জুবায়েদকে পছন্দ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মাহির তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে জুবায়েদকে খুন করে।”
 

তিনি আরও জানান, “বর্ষা জানিয়েছেন, তিনি জুবায়েদকে পছন্দ করলেও তা কখনো তাকে জানাননি। তাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক বা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের প্রমাণও মেলেনি। কেবল বর্ষার কথাতেই মাহির ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।”
 

ওসি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষা জানিয়েছেন, জুবায়েদের বন্ধু সৈকতের সঙ্গে তার পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে। অন্য কোনো মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ ছিল না। জুবায়েদের মৃত্যুর খবর পেয়ে সৈকতকে তিনি মেসেজ করেন। বর্ষার মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কোনো আতঙ্ক, অনুশোচনা বা মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ পাওয়া যায়নি; বরং তিনি পুরো সময়টাই ছিলেন শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী।”
 

জুবায়েদ হোসাইন ছিলেন ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। গত এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ১৫ নুরবক্স লেনের রৌশান ভিলা নামের বাসায় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি বিষয়ে বর্ষাকে প্রাইভেট পড়াতেন।
 

রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ওই বাসার তিনতলায় বর্ষার বাড়িতেই ছুরিকাঘাতে নিহত হন জুবায়েদ। সিঁড়ি বেয়ে উপরে পর্যন্ত রক্তের দাগ ছিল, এবং তিনতলার সিঁড়িতে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
 

ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে হেফাজতে নেয়। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে।
 

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটির পেছনে আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।