তামাক কোম্পানির ক্রমবর্ধমান প্রভাব: রাষ্ট্রকেও গ্রাস করছে

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ৩১ মে ২০২৫ ০৫:১১ অপরাহ্ণ   |   ১০২ বার পঠিত
তামাক কোম্পানির ক্রমবর্ধমান প্রভাব: রাষ্ট্রকেও গ্রাস করছে

ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-

 

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তামাকের বিরূপ প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা।
 

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন,

“সকল নেশার সূচনা ধূমপান থেকে। তামাক কোম্পানিগুলো সুপরিকল্পিতভাবে গবেষণা করে বাজার তৈরি করছে, অথচ আমরা আমাদের সন্তানদের রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তামাকবিরোধী কোনো পাঠ নেই, এমনকি পাঠ্যপুস্তকে একটি প্যারাগ্রাফও রাখা হয়নি—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

তিনি আরও বলেন, শিশুদের আট-দশ বছর বয়স থেকেই ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা উচিত। কারণ, তামাক কোম্পানির প্রভাব শুধু ব্যক্তি নয়, ধীরে ধীরে রাষ্ট্রকেও প্রভাবিত করছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্ত অবস্থান নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
 

তামাকমুক্ত দেশ গড়তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন,

“তামাক কোম্পানিগুলো সরকারকে যে রাজস্ব দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হয়। তামাকজনিত রোগ যেমন ক্যান্সার, ফুসফুসের রোগ ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে হলে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তেই হবে।”

তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন-এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, একদিকে আমরা এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছি, অন্যদিকে সরকারের কিছু অংশ এখনো তামাক কোম্পানির বোর্ডে আছে—এ বৈপরীত্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
 

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন,

“তামাক কোম্পানিগুলো শুধু আমাদের শ্রমিকদের শোষণ করছে না, দেশের মাটি, বাতাস ও পানি দূষিত করছে। কোমলপ্রাণ কিশোর-তরুণদের তারা নানা উপায়ে আকৃষ্ট করছে, যা ভয়াবহ। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে কার্যকর করতে এর সংশোধন প্রয়োজন—এ নিয়ে কাজ চলছে। সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে এগিয়ে এসে এ লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে।”
 

পরিবেশ ও স্বাস্থ্যে তামাকের ভয়াবহতা

বিশেষ অতিথি হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন,

“যদিও দেশে ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ, তবুও তামাক কোম্পানিগুলো দেশেই উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের শোষণ করা হচ্ছে। তারা এমনভাবে প্রচার করছে যেন সরকার তাদের টাকায় চলে—যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। সরকার চলে জনগণের টাকায়।”

তিনি আরও জানান, নদীর পাড়ের উর্বর জমিতে তামাক চাষের কারণে বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, মাছের প্রজনন কমে যাচ্ছে এবং গবাদিপশু পালনে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে শিশু, কিশোর ও নারীদের স্বাস্থ্যে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
 

সম্মাননা প্রদান

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রেল সচিব ফাহিমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরসহ অনেকে।
সভা শেষে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সম্মাননা ২০২৫’ প্রদান করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ অবদান রাখাদের মাঝে।