রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙনের দেড় শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে

প্রকাশকালঃ ০৬ জুলাই ২০২৪ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ ৫৯৪ বার পঠিত
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙনের দেড় শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তার পানি বাড়ছে। এর ফলে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। তিস্তার ভাঙনের দেড় শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে রাস্তাঘাট, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তিস্তা নদীর ভাঙনে গঙ্গাচড়া উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ এখন হুমকির মুখে। তথ্য অনুযায়ী ঘরবাড়ি ছাড়ছেন প্রায় ৫০ পরিবার। পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে। অনেকে রাস্তায় গবাদি পশু ও পরিবার নিয়ে বাস করছেন।

 

তথ্য অনুযায়ী, গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের নিম্নাচঞ্চল ও চরের আলফাজটারী, আনছারেরটারী, নরশিং মধ্যপাড়া, হাসানটারী, আলমারবাজার, গজঘণ্টা ইউনিয়নের নিলারপাড়া, আলালচর, ছালাপাকচর, গাওছোয়া, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, পশ্চিম ও পূর্ব ইচলী, বাগেরহাট, কেল্লারপাড়, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, চিলাখালচর, মটুকপুরচর, নোহালী ইউনিয়নের মিনারবাজার, নোহালীচর, বৈরাতীসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা, জমির ফসল।

 

অন্যদিকে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। পানি বৃদ্ধিতে পুকুর, জলাশয় ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে যায়, নষ্ট হয় চাষকৃত বিভিন্ন ফসল। এখন পানির সঙ্গে ভাঙনে দিশাহারা পরিবারগুলো। এর ফলে তিস্তার পানিবন্দি ও ভাঙনের খেলায় সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তারা। সরেজমিন আজ শনিবার মর্ণেয়া চরের আলফাজটারী গিয়ে দেখা যায়, শাফিকুল, আজিজুল, ওয়াহাব, ছামাদ, মোরসেদুল, আবেদ আলী, আব্দুল হাকিম, হামিদ, হালিম, রহিম, জব্বার, মতিন, মতিয়ার, জলিল, মজমুল, আব্দুল করিম, মশিয়ার, ছালাম, আব্দুর রহমান, পছা, শরিফুল, ছেরাব উদ্দিন, মোশফেকুল, মনির, সিরাজুল, জছির, জলিল, হামিদুলসহ ৫০ পরিবারের বাড়িঘর, ভিটামাটি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে।

 

ভাঙনে নিঃস্ব শাফিকুল ভেঙে যাওয়া বাড়ির পাশে বসে তিস্তার দিকে তাকিয়ে নীরবে কাঁদছিলেন। তিনি জানান, কোনো রকমে ঘরের টিন খুলে নিতে পারলেও অনেক জিনিসপত্র ভেসে গেছে। ভাঙাগড়ায় ভাইয়ের জায়গায় খুলে নেওয়া টিন রেখেছি। কোথায় নুতন করে বাড়ি করব দিশা পাচ্ছি না। হাতে নেই তেমন টাকা, দিনমজুরিতে চলে সংসার। আবেদ আলী বলেন, তার একমাত্র বাড়ির জায়গাটুকু তিস্তায় গেল। এখন কোথায় বাড়ি করবেন উপায় পাচ্ছেন না। তা ছাড়া স্ত্রী রাবেয়ার সন্তান হওযার পর ২৪ দিন হলো, তাকে ভালোমতো থাকতে দিতে পারছেন না, ঠিকমতো খেতেও দিতে পারছেন না। পাননি সরকারি কোনো সাহায্যও।

 

এজারুল ও আলমগীর জানান, তাদের এলাকার আরো ৫০ বাড়িসহ আনছারটারীর শতাধিক বাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। আনছারটারীর ছয়ফাল, গফুর, বাচ্চা জানান, তারা ভাঙন থেকে বাঁচতে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের পাইলিং দিচ্ছেন। মর্ণেয়াচরের বয়স্ক আব্দুর রহমান বলেন, ‘এগুলো দেখি কী করেন। এলাকার অনেক বাড়ি, আবাদি জমি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি- সব ভেঙে গেলেও কেউ দেখতে আসে নাই। ভেঙে পড়া খুঁটি বিদ্যুতের লোকদের বললেও  সরিয়ে নিচ্ছে না। তিনি বাড়িভাঙা পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানান।

 

মর্ণেয়া ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে তিস্তায় ৫০ পরিবারের বেশি ভেঙে গেছে। কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, বাকিদেরও দেওয়া হবে। তালিকা করা হচ্ছে। রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম জানান, ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি সরে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না বলেন, ভাঙনকবলিত পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

 

নুতন করে যাদের বাড়ি ভেঙেছে তাদের দেওয়া হবে। ইউপি চেয়ারম্যানকে তালিকা করতে বলা হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, লোল্যান্ড এলাকায় ভাঙন রোধে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তবে ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।