আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৯ মে ২০২৫ ০৩:১৩ অপরাহ্ণ   |   ৮৮ বার পঠিত
আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ শ্রমিক নেবে জাপান

অনলাইন ডেস্ক:-

 

আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জাপানি কর্তৃপক্ষ ও দেশটির ব্যবসায়ী মহল। সম্প্রতি টোকিওতে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ সেমিনার অন হিউম্যান রিসোর্সেস’-এ এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “জাপানে বাংলাদেশের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার খুলছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা করবে।”
 

তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগ নয়, বরং জাপানকে জানার, শেখার এবং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও গভীর করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
 

সেমিনারে দুটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়:

(১) বাংলাদেশ ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস) - একটি জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগ।

(২) বিএমইটি, জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (NBCC) – যা ৬৫টিরও বেশি কোম্পানির একটি ফেডারেশন – এবং জেবিবিআরএ (জাপান-বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি)
 

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের ১৮ কোটির বেশি জনগণের অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। তাদের জন্য আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেওয়া সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।”
 

শিজুওকা কর্মপরিবেশ উন্নয়ন সমবায় সংস্থার প্রতিনিধি পরিচালক মিতসুরু মাতসুশিতা বলেন, “জাপানি অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি বিশ্বাস করি এই আগ্রহ আরও বাড়বে।” তিনি যোগ করেন, “বাংলাদেশি তরুণদের মেধা ও সম্ভাবনা অসাধারণ। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব।”
 

এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা স্মরণ করেন, “প্রায় ১৪ বছর আগে অধ্যাপক ইউনূস জাপানে এসে নারীদের উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকায় আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ তরুণ ও দক্ষ শ্রমিকের একটি সম্ভাবনাময় উৎস। তারা জাপান ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারবে।”
 

তিনি ঘোষণা দেন, “আমরা আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ বাংলাদেশি শ্রমিককে জাপানে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।”
 

ওয়াতামি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মিকি ওয়াতানাবে জানান, বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত তাদের একটি স্কুল প্রতিবছর ১,৫০০ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তারা এই সংখ্যা ৩,০০০-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা জাপানের শ্রমবাজারে সফলভাবে প্রবেশ করতে পারবে।”
 

জেইটিসিও (জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনি অ্যান্ড স্কিল্ড ওয়ার্কার কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন)-এর চেয়ারম্যান হিরোআকি ইয়াগি বলেন, “বাংলাদেশি কর্মীদের জাপানের শ্রমবাজারে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভাষা শিক্ষকের ঘাটতি এখনো একটি চ্যালেঞ্জ।”
 

জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিকি হিরোবুমি বলেন, “জাপানে জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশি শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং জাপানের জন্যও এক আশাব্যঞ্জক সুযোগ।”
 

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী বলেন, “২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে শ্রমিক সংকট এক কোটি ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করতে পারে।”

সূত্র: বাসস