গণধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা কুখ্যাত এক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:২৬ অপরাহ্ণ   |   ৮৩৪ বার পঠিত
গণধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করা কুখ্যাত এক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ

ঢাকা প্রেস
আরিফুজ্জামান (সাগর),বিশেষ প্রতিনিধি:-


গণধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে পরবর্তী সময়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা কুখ্যাত এক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ মাসুম (২৫), মোঃ শরীফ (২৩) ও মোঃ ইস্রাফিল (২২)। 


 



শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) যাত্রাবাড়ীর ফলবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। 
 

যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, পনের দিন পূর্বে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে গণধর্ষণের শিকার এক ভিকটিমের সাথে পরিচয় হয় চক্রটির মূল হোতা গ্রেফতারকৃত মাসুমের।  পরবর্তী সময়ে তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। প্রেমের সূত্র ধরে গত শনিবার (১১ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) ভিকটিমকে কাজলারপাড় এলাকায় এক বাসায় ডেকে আনে মাসুম। সেই বাসায় জোরপূর্বক আটকে রেখে মাসুম  প্রথমে তাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে তার দুই বন্ধু ইস্রাফিল ও শরীফ ভিকটিমকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে তারা ভিকটিমকে ধর্ষণের আপত্তিকর ভিডিও দেখিয়ে ভিকটিমের নিকট ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। তখন ভিকটিম তার নিকট থাকা নয় হাজার ৫০০ টাকা তাদেরকে প্রদান করে। পরবর্তী সময়ে তারা ভিকটিমকে একটি ভাড়া করা মোটরসাইকেলে তুলে দিয়ে তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা নিয়ে আসার কথা বলে। অন্যথায় ধারণ করা ভিডিও পরিবারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। গত ১৫ জানুয়ারি ইস্রাফিল ভিকটিমকে ফোন করে বলে ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার মাসুম তার বন্ধুদের নিয়ে সাকরাইন অনুষ্ঠান করবে এবং তারা সেখানে তাকে যেতে বলে। না গেলে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করা হয়। ভিকটিম কৌশলে তাদের কথায় রাজী হয় এবং বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অবগত করে।
 

থানা সূত্রে আরো জানা যায়, ঘটনাটি অবহিত হওয়ার পরে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) বিকেলে ভিকটিমের সাথে কৌশলে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় যাত্রাবাড়ীর ফলবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ী থানার একটি টিম। এ সময় তাদের হেফাজত হতে তিনটি মোবাইলফোন ও ভিকটিমের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে নেয়া আট হাজার ৬৫০ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যাত্রবাড়ী থানায় ধর্ষণসহ পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
 

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য সম্পর্কে থানা সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্য। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অ্যাপসের মাধ্যমে নারীদেরকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে  এবং সেই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তী সময়ে ধারণকৃত ভিডিও পরিবারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে পরবর্তীতে তাদের চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন সময়ে  আবার ধর্ষণ করে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। মাসুম এ পর্যন্ত এরূপ ১৬টি ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। কোন ভুক্তভোগী এ সকল ঘটনায় অভিযোগ না করায় গ্রেফতারকৃতরা এতোদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিলো।
 

গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার নিবিড় তদন্ত ও ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।