মেয়ের বিয়ের আগের রাতে বগুড়ায় মা-ছেলেকে হত্যা, লুট হয়ে গেল টাকা-স্বর্ণ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৪:৫৫ অপরাহ্ণ   |   ৩৬ বার পঠিত
মেয়ের বিয়ের আগের রাতে বগুড়ায় মা-ছেলেকে হত্যা, লুট হয়ে গেল টাকা-স্বর্ণ

বগুড়া প্রতিনিধি:-

 

বগুড়ার শিবগঞ্জে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার গুজিয়ার সাদুল্লাপুর বটতলা গ্রামে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে এক নারী ও তার ছেলেকে। মঙ্গলবার সকালে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ মর্গে পাঠায়।
 

নিহতরা হলেন—কুয়েত প্রবাসী ইদ্রিস আলী প্রামাণিকের স্ত্রী রানী বেগম (৪০) ও তাদের ছেলে, ফকির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমরান প্রামাণিক (১৬)।
 

কীভাবে ঘটল হত্যাকাণ্ড

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইদ্রিস আলী প্রায় ৮ বছর ধরে কুয়েতে কর্মরত। স্ত্রী-সন্তানরা গ্রামে থাকতেন। রানী বেগমের বড় মেয়ে ইলা প্রামাণিক বগুড়ায় সরকারি মুজিবর রহমান মহিলা কলেজে পড়াশোনা করতেন। বুধবার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এজন্য রানী বেগম বাড়িতে কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা রেখেছিলেন।
 

হত্যার রাতেই ইমরানের বন্ধু ও প্রতিবেশী মেহেদী হাসান তাদের বাড়িতে রাতযাপন করেন। তিনি ইমরানের সঙ্গে এক ঘরে, আর রানী বেগম অন্য ঘরে শুয়ে পড়েন।
 

সকাল ৮টার দিকে রাজমিস্ত্রিরা কাজে আসলে গেট বন্ধ পান। বারবার ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের খবর দেন। পরে পুলিশ এসে গেট ভেঙে ঢুকে রানী বেগমের মরদেহ বারান্দায় ও ইমরানের মরদেহ ঘরের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। দুজনকেই কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
 

লুট হওয়া সম্পদ

পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, খুনের পর দুর্বৃত্তরা নগদ টাকা, প্রায় তিন ভরি স্বর্ণালংকার ও ইমরানের মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। এদিকে, হত্যার পর থেকে প্রতিবেশী বন্ধু মেহেদী হাসানের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
 

পরিবারের কান্না

নিহত ইমরানের চাচা ফেরদৌস প্রামাণিক জানান, ইদ্রিস আলী জমি বিক্রি করে কুয়েতে যান। স্ত্রী-সন্তানরা গ্রামে ছিলেন। মেয়ের বিয়ের আগেই মা-ছেলেকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
 

হত্যার খবর পেয়ে বড় মেয়ে ইলা বাড়িতে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “আমার মা-ভাই কী অপরাধ করেছিল, যে তাদের এভাবে খুন করা হলো? টাকা-স্বর্ণালংকার চাইলে নিয়েই যেত, খুন করার দরকার ছিল না। এখন আমি কার কাছে থাকব?”
 

পুলিশের তদন্ত

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মো. রায়হান জানান, হত্যার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে। মেহেদী হাসানের সন্ধান পাওয়া গেলে মূল ঘটনা পরিষ্কার হবে।
 

নিহতদের মরদেহ পিবিআইয়ের মাধ্যমে সুরতহাল শেষে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের স্বামী ইদ্রিস আলীকেও খবর দেওয়া হয়েছে; তিনি কুয়েত থেকে দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।