আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই দিন ধরে ক্রমাগত পানি বেড়ে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানির সমতল ক্রমেই বিপদসীমার দিকে ফুঁসে উঠছে। এ অবস্থায় ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বুধবার (১৩ আগস্ট) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে কুড়িগ্রাম পাউবো।
পাউবোর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে লঘুচাপ সৃষ্ট হয়েছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে রংপুর ও ময়মনসিংহ এবং এর উজানে ভারতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা (১৪ আগস্ট পর্যন্ত) দেশের অভ্যন্তরে এসব অঞ্চলসহ উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী দুই থেকে চার দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান নদ-নদীর উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা এবং দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে ব্রহ্মপুত্রের পানি। তবে পরবর্তী দিনগুলোতে পানির সমতল স্থিতিশীল থেকে হ্রাস পেতে পারে।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার নদের অববাহিকার পাটেশ্বরী গেজ স্টেশনে ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী গেজ স্টেশনে ৬৩ মিলিমিটার এবং তিস্তার কাউনিয়া গেজ স্টেশনে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পাউবোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে কাউনিয়া গেজ স্টেশনে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী গেজ স্টেশনে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানিও সমান তালে বাড়ছিল। তবে সবকটি নদ-নদীর পানির সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নদী তীরবর্তী অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে চলছে ভাঙন। জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও নাজিমখাঁন এলাকার শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়েছেন।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে নাজিমখাঁন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাঁসারপাড় গ্রামে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের খনন করা একটি খাল এলাকাবাসীর জন্য হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকালয় ও কৃষিজমির অতিরিক্ত পানি খাল হয়ে নদীতে পতিত হওয়ার কথা থাকলেও ঘটছে উল্টো ঘটনা। তিস্তার পানি বেড়ে খালের ভেতর দিয়ে তীব্র বেগে উল্টো প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ওই এলাকার মানুষের ভিটামাটি ভাঙন হুমকিতে পড়েছে। ওই এলাকায় শতাধিক বসতবাড়িসহ একটি মাদ্রাসা ভাঙন হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
হাঁসারপাড় গ্রামের বাসিন্দা অনুকূল ও সুজন বলেন, বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ খালটি কাটার সময় ভেকু মেশিন দিয়া খাড়া কাটিং দিছে। আমরা এভাবে কাটতে নিষেধ করছিলাম। কিন্তু তাদের লোকজন শোনে নাই। লোকালয় ও নিচু এলাকার পানি খাল দিয়ে নেমে নদীতে পড়ার কথা। কিন্তু এখন উল্টা তিস্তার পানি বেড়ে খালের ভিতর দিয়া তীব্র বেগে ঢুকে ভাঙন শুরু হইছে। আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছি। কিছু জিও ব্যাগ না ফেললে যেকোনও সময় আমাদের বাড়িঘর ভাঙতে পারে।’
এদিকে ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। নাগেশ্বরী উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুধকুমার তীরবর্তী কেদার ও রায়গঞ্জ ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। এখনও বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির মতো অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ পানি বাড়তেছে। নদের মাঝের কিছু নিচু চরে পানি ঢুকতেছে। তবে এখনও বাড়িঘরে পানি উঠে নাই। এমন করি বাড়তে থাকলে বন্যা হইতে পারে।’
পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ‘পানি বাড়ছে। বন্যার আশঙ্কা আছে। নাজিমখাঁন এলাকায় তিস্তার পানির ভাঙনরোধে আগে ৫০০ ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল। এখন আরও এক হাজার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো দিয়ে যদি ভাঙন কিছুটা ঠেকানো যায়। আমাদের খুব বেশি বরাদ্দ নেই।’
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তাসহ সকল সহায়তা উপকরণ মজুত আছে।’