গোপালগঞ্জে কারাগারে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট: শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৬ জুলাই ২০২৫ ০৫:৪২ অপরাহ্ণ   |   ৩৩ বার পঠিত
গোপালগঞ্জে কারাগারে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট: শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি

গোপালগঞ্জ, ১৬ জুলাই ২০২৫: গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহরে হামলার পর পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরই জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে সংঘবদ্ধ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। শহরজুড়ে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে একটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শেষে মাদারীপুরের পথে যাত্রাকালে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরের ওপর ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। গোপালগঞ্জ শহর ছাড়ার সময় বহরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এনসিপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
 

এই উত্তেজনার রেশ পড়ে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে। সন্ধ্যার দিকে একটি সংগঠিত দল কারাগারের প্রধান ফটকে হামলা চালায়। হামলায় অন্তত কয়েকজন কারা রক্ষী আহত হন। হামলাকারীরা কারাগারের সামনে থাকা একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং আশপাশের স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়।
 

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে অভিযান শুরু করে। ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ব্যবহার করা হয়। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।
 

পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট ও সেনা সদস্যদের এনসিপি নেতাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে।
 

পরিস্থিতি বিবেচনায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে সকল ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, “আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়।”
 

হামলার ঘটনার পর শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট আগেভাগেই বন্ধ হয়ে যায়। জনশূন্য হয়ে পড়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।
 

এনসিপি নেতারা এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হামলা দাবি করে বলেন, “সরকারপন্থী সংগঠনগুলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ভণ্ডুল করতে এই বর্বর হামলা চালিয়েছে।” তারা দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
 

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। প্রশাসন থেকে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।