১৯ জুলাই গুলিতে শহীদ হয়েছিল কুড়িগ্রামের রায়হান, অভাব অনটনে পরিবার

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২০ জুলাই ২০২৫ ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ   |   ২৪ বার পঠিত
১৯ জুলাই গুলিতে শহীদ হয়েছিল কুড়িগ্রামের রায়হান, অভাব অনটনে পরিবার

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

‘রায়হানুল ইসলামের কথা মনে পড়লেই শরীরের ভিতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। কিছুই আর ভালো লাগে না। শুধু বোবা কান্না ছাড়া আর কিছুই করার নেই। রায়হানের কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে বুকে চাপা কষ্টগুলো আমাকে যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। বাবা হয়ে কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে একমাত্র সন্তানকে দাফন করেছি, সেটি আর কাউকে বোঝানোর ভাষা নেই।’—এসব কথা বলেন ২৪-এর ১৯ জুলাই ঢাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ হওয়া আবু রায়হানুলের বাবা আব্দুর রশিদ।
 

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার পৌর শহরের মুন্সিপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদ ও রাহেনা দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল আবু রায়হানুল ইসলাম ওরফে রায়হান (৩২)।
 

২০২৪-এর ১৯ জুলাই রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছিল সে। ঘড়ির কাঁটা যখন ২টা ৩৫ মিনিট, ঠিক ওই সময়ে শেষবারের মতো ফোনে কথা বলে স্ত্রী রিফাত জাহান রিতুর সঙ্গে। এরপর সব ইতিহাস—লাশ হয়ে পরদিন ২০ জুলাই সকালে বাড়িতে ফেরে রায়হান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে রায়হানুল অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আওতায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ বছর চাকরি করেছিল। এরপর ভালোভাবে বাঁচার আশায় ২০২৪-এর জানুয়ারিতে স্ট্যান্ডিং গ্রুপে নতুন কর্মজীবন শুরু করে সে। ভালোই কাটছিল ছ’মাস। মাত্র ৬ মাস নতুন কর্মজীবন পার করতেই বিধিবাম। ফ্যাসিস্ট হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে অকালে জীবন দিতে হয়েছে তাকে। রায়হানুলের ডান কপালের ভ্রুর উপরে গুলি ঢুকে মাথার পেছনের খুলি উড়ে যায় সেই বুলেট। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ওই দিনই বাড্ডার এএনজেড হাসপাতাল থেকে রায়হানুলের সহকর্মী ও স্বজনরা শত বাধা উপেক্ষা করে লাশ নিয়ে আসে উলিপুর পৌরসভার মুন্সিপাড়ায় তার নিজ বাড়িতে।
 

রায়হানুলের বাবা ও মা আজও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান রায়হানুলকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল! অভাবের সংসারে সুখের হাতছানি নিয়ে আসবে রায়হান—এই প্রত্যাশায় জীবনের সব অর্জন জলাঞ্জলি দিয়ে রায়হানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছিলেন বাবা আব্দুর রশিদ। সব স্বপ্ন এখন গুড়েবালি। লাশ বাড়িতে পৌঁছানোর পর ২০ জুলাই জানাজার নামাজের জন্য মাইকিং করতে দেয়নি তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন। উলিপুর এমএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানাজা শেষে নীরবে নিভৃতে চিরনিদ্রায় শায়িত হয় রায়হান। রায়হানের একমাত্র কন্যা ৪ মাস বয়সি রাওজাকে এতিম করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় সে। শিশু রাওজার বয়স এখন ১৪ মাস—সময় যতই এগোচ্ছে, ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে সে। বাবা যে তার নেই, সেটিও বোঝে না সে। অবুঝ এ শিশুকে নিয়ে মায়ের কত বেদনা, কত ভাবনা! কী হবে রাওজার?
 

জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনসহ সরকারি, বেসরকারি ও রাজনৈতিকভাবে এ পর্যন্ত রায়হানের বাবার হাতে এসেছে ৩ লাখ এবং স্ত্রী রিতুর হাতে এসেছে ১৬ লাখ টাকা। অকালে স্বামী হারানোর বেদনা নিয়ে রিতু এখন তার বাবার বাড়ি ঢাকার সাভারে বসবাস করছেন। বাবার ঘাড়ে বসে বসে খাওয়া আর কতদিন চলবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না সে। তদুপরি নানা প্রতিকূলতার মাঝেও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মাস্টার্স পরীক্ষায় পাশ করেছে রিতু। স্বামী হারানোর বেদনা নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না রিতু কিছুতেই।
 

শহীদ আবু রায়হানুল ইসলামের স্ত্রী রিতু জানান, “আমার একটি সরকারি চাকরি দরকার। চাকরি পেলে শিশু রাওজাকে নিয়ে বেদনার দিনগুলো কাটিয়ে শিশুটিকে মানুষ করতে পারতাম।”