ময়মনসিংহে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৫ উদযাপন।

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:১৩ অপরাহ্ণ   |   ২৮ বার পঠিত
ময়মনসিংহে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৫ উদযাপন।

মকবুল হোসেন, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি:

 


দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা; গড়বে আগামীর শুদ্ধতা” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ০৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হলে মানববন্ধন ও এডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
 

ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ফারাহ শাম্মী, এনডিসি; এবং মুখ্য আলোচক ছিলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি আজিজ আহমেদ সাদেক রেজা এবং ময়মনসিংহ সচেতন নাগরিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুবর্ণা পলি দ্রং।
 

প্রধান অতিথি বলেন, দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি গুরুতর ও জটিল সমস্যা, যা আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি উল্লেখ করেন, দুর্নীতি সরাসরি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে—ফলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে, আর বিদেশি বিনিয়োগ না হলে অর্থনৈতিক গতি সঞ্চারও ব্যাহত হয়। একটি দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে ব্যাপক বিনিয়োগের বিকল্প নেই।
 

তিনি বলেন, দুর্নীতি আমাদের সমাজে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য হ্রাস না করে বরং বাড়িয়ে তুলছে। তবে এ সমস্যা দূরীকরণে সরকার নিষ্ক্রিয় নয় বরং ধারাবাহিকভাবে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে। সরকারি সেবাসমূহের ডিজিটালাইজেশন দুর্নীতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন ইজিপি টেন্ডার, নামজারি সহ বহু সেবা অনলাইনে হওয়ায় অনিয়মের সুযোগ কমে গেছে। জনগণ ঘরে বসেই বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারছেন, যা স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
 

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি লাঘবে দুর্নীতি দমন আইন, তথ্য অধিকার আইনসহ বিভিন্ন আইনি কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যা সরকারি পর্যায়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
 

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোন কাজ যেন অস্বচ্ছতার বেড়াজালে আবদ্ধ না থাকে। যদি কোনো নাগরিক প্রত্যাশিত সেবা না পান, তবে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে সেই সেবা না পাওয়ার কারণ জানতে পারবেন এবং প্রয়োজন হলে প্রতিকার চাইতে পারবেন।
 

মুখ্য আলোচক ও রেঞ্জ ডিআইজি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্যক্তিগত লাভের জন্য সরকারি পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারই দুর্নীতি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বেশিরভাগ দুর্নীতি ঘটে সরকারি দপ্তরগুলোতে। তিনি বলেন, আমি যদি একজন দপ্তর প্রধান হিসেবে নিজেই নৈতিকতার পথ থেকে বিচ্যুত হই, তাহলে আমার অধীনস্থদের কীভাবে বলবো দুর্নীতি করো না? প্রথমে নিজেকেই সংশোধন করতে হবে, তারপরই অন্যকে উপদেশ দেওয়ার নৈতিক অধিকার জন্মায়।
 

তরুণদের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, কেন তরুণরাই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সবচেয়ে বড় শক্তি? বাংলাদেশের প্রায় চার কোটির বেশি মানুষ তরুণ এই বিশাল জনগোষ্ঠীই আজ সবচেয়ে শিক্ষিত, সচেতন, প্রযুক্তিদক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ। তাই দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের আসল হাতিয়ার হলো এই তরুণ প্রজন্ম। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তরুণরাই হবে আমাদের সত্যিকারের পরিবর্তনের শক্তি ইনশাআল্লাহ।
 

দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রণজিৎ কুমার কর্মকারের শুভেচ্ছা ও স্বাগত বক্তব্যে রাখেন। আলোচনা সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।