বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রথমবারের মতো কোনো গণমাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিলেন। এতে তিনি আসন্ন নির্বাচন, আওয়ামী লীগ শাসন, বিএনপির কৌশল, গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি নিয়ে বিস্তারিত মতামত দেন।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সোমবার (৬ অক্টোবর) প্রকাশিত সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বে তারেক রহমান বলেন—
গণমাধ্যমে কথা না বলার কারণ
“আসলে আমি কথা বলিনি, বিষয়টি এমন নয়। আমি সবসময় দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিভিন্ন উপায়ে দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। স্বৈরাচার সরকারের সময় আদালতের আদেশে আমার বক্তব্য প্রচারেও বাধা দেওয়া হয়েছিল। গণমাধ্যমের অনেকেই হয়তো ছাপাতে চাইলেও পারেননি। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি।”
দেশে ফেরার প্রসঙ্গে
“কিছু বাস্তব কারণে এখনও দেশে ফেরা হয়নি। তবে সময় এসেছে বলে মনে হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই ফিরব। নির্বাচনের সময় জনগণের পাশে, জনগণের মধ্যেই থাকতে চাই।”
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “বিভিন্ন সময় নানা শঙ্কার কথা শুনেছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, জনগণই আমার নিরাপত্তা।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও তাঁর ভূমিকা
“আমি কখনোই নিজেকে জুলাই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে দেখি না। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলন। বিএনপি, অন্যান্য দল, ছাত্র, শিক্ষক, নারী, শ্রমিক—সব শ্রেণির মানুষ এতে অংশ নিয়েছে। এই আন্দোলনের নেপথ্যে কোনো ব্যক্তি নয়, জনগণই প্রকৃত চালিকাশক্তি।”
নির্বাচন ও বিএনপির অবস্থান
“আমরা শুরু থেকেই বলেছি—যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ঘোষণা দিয়েছে—আমরা আশা করি তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।”
তিনি বলেন, “বিএনপি রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সবার অংশগ্রহণ চায়। আমরা চাই আন্দোলনে যারা পাশে ছিল, তারাই মিলিতভাবে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ুক।”
মনোনয়ন ও প্রার্থী বাছাই
“আমরা এমন প্রার্থী বেছে নিতে চাই, যিনি এলাকার মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত, জনসমর্থন আছে, জনগণের সমস্যা বোঝেন। শুধু দলের নয়—জনগণের আস্থা যাঁর প্রতি, তাকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। তৃণমূলের মতামতও বিবেচনায় থাকবে।”
নির্বাচনে নিজের ভূমিকা
“আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। নির্বাচনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গী। তাই জনগণের নির্বাচনে আমি অবশ্যই অংশ নেব, ইনশাআল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ ও দল।”
খালেদা জিয়ার ভূমিকা
“খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি অসুস্থ, কিন্তু তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। যদি শারীরিকভাবে সক্ষম হন, নির্বাচনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ভূমিকা রাখবেন।”
বিএনপির অগ্রাধিকার ও ভবিষ্যৎ
“বিশ্ব বদলে গেছে, সমাজ-অর্থনীতি বদলে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও কোভিড যুগের অভিজ্ঞতা আমাদের নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য—মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। মানুষের জীবন যেন আজকের চেয়ে আগামীকাল একটু ভালো হয়, সেটিই বিএনপির মূল লক্ষ্য।”
দুর্নীতি ও সুশাসন প্রসঙ্গে
“আমাদের সময়ে দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নতি করেছিল—এটি পরিসংখ্যানেই প্রমাণিত। আমরা স্বীকার করছি, পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চাই এমন বাংলাদেশ, যেখানে জনগণ মাথা উঁচু করে বলতে পারে—আমরা সৎ ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্রে বাস করছি।”
অভিযোগ ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা
“৫ আগস্টের পর দলের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। আমরা ইতিমধ্যে প্রায় সাত হাজার জনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি। সব অভিযোগই যে সত্য নয়, তা-ও যাচাই করছি। বিএনপি কোনো অনিয়ম বরদাস্ত করবে না।”
শেষে তারেক রহমান বলেন,
“এই আন্দোলন, এই নির্বাচন—সবই বাংলাদেশের জনগণের। আমি বিশ্বাস করি, জনগণই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদের বিশ্বাসই আমাদের রাজনীতির মূল ভিত্তি।”সম্পাদনা: লেখা সংক্ষেপিত ও পুনর্গঠিত হয়েছে পাঠযোগ্যতা ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে।