বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) রায়গঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আটঘরিয়া গ্রামের কুড়মালি পাঠশালা প্রাঙ্গণে কুড়মালি ভাষা সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে উৎসবটি বড় আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। একইসঙ্গে আশপাশের আদিবাসী পল্লীতেও ধর্মীয় রীতি মেনে কারাম পূজার আয়োজন করা হয়।
তাড়াশ ও রায়গঞ্জ ছাড়াও আশপাশের সাতটি উপজেলার মাহাতো, কুর্মি মতাতো, সাঁওতাল, ওঁরাও, বড়াইক, সিং, পাহান, মাহালি সম্প্রদায়ের মানুষ এ উৎসবে অংশ নেন।
পশ্চিম আটঘরিয়া গ্রামের কুড়মালি ভাষার গবেষক উজ্জ্বল মাহাতো বলেন, ভাদ্র মাসে যখন চারদিকে বর্ষার পানিতে মাঠঘাট ভরে যায়, তখন কৃষিজীবী আদিবাসী পরিবারের নারী-পুরুষ অপেক্ষাকৃত অবসর সময় পান। আর এ সময়েই পালিত হয় আদিবাসীদের প্রাণের উৎসব—কারাম, যা তারুণ্যের উৎসব হিসেবেও পরিচিত।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, সোমবার ডালায় গজানো চারা গাছের বিশেষ যত্নের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। বুধবার মূল পূজার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় অনুষ্ঠান।
মাহাতো সম্প্রদায়ের প্রবীণ সারথি রানি মাহাতো (৭০) জানান, স্থানীয় ভাষায় ‘জাঁওয়া’ বলতে বোঝায় মাটি, বালি, মুং, কুর্থি, ছোলা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি চারা গজানোর ডালা। এটি প্রতীকীভাবে সন্তানকে স্নেহে লালনপালন ও সংরক্ষণের প্রতিচ্ছবি।
কারাম উৎসব মূলত প্রকৃতি ও কৃষিজীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বীজ থেকে চারা, আর চারার যত্ন—সবই প্রকৃতিকে পূজা ও সংরক্ষণের বার্তা বহন করে।
আদিবাসী শিক্ষার্থী দুর্জয় মাহাতো জানান, উৎসবের শেষ রাত ঝুমুর নাচ ও গান ছাড়া অসম্পূর্ণ। গভীর রাত পর্যন্ত চলনবিলের আদিবাসী পল্লীগুলো ঝুমুরের তালে কারামের রঙে ভরে ওঠে।