নওগাঁয় মেম্বার নান্নুর দাপটে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা: ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৪ জুন ২০২৫ ০১:৪২ অপরাহ্ণ   |   ১২১ বার পঠিত
নওগাঁয় মেম্বার নান্নুর দাপটে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা: ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড

ঢাকা প্রেস-নিজস্ব প্রতিনিধি (নওগাঁ):-

 

নওগাঁ সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইয়াছিন আলী নান্নুর দাপটে অতিষ্ঠ ইউনিয়নবাসী। গত ৫আগস্টের পর থেকে নিজ এলাকাসহ পুরো ইউনিয়ন জুড়ে নান্নু ও তার বাহিনীর নানা অপকর্ম ও সন্ত্রাসী তান্ডবে নাকাল হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া নান্নুর বিরোধীতার কারণে ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজও চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদকে নিয়ে নান্নুর বিভিন্ন মিথ্যে অপপ্রচারে একে একে বেরিয়ে আসছে তার নানা অপকর্মের ঘটনা। 

 

 

সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় দুঃস্থ-নারী উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচির পুরনো কার্ডের মেয়াদ বাড়িয়ে একসঙ্গে ৫মাসের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিজন সুবিধাভোগীকে মোট ১৫০কেজি করে চাল দেওয়া হয়। সেই চাল পেতে ইউনিয়নের ২৮১জন কার্ডধারীর মধ্যে প্রায় ২০০জনের কাছ থেকে ১হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে চাল বিতরণের প্রায় ১৫দিন পর অভিযোগ আনেন মেম্বার নান্নু। এমন মিথ্যে অভিযোগে এনে ইউনিয়নের সুনাম নষ্ট করার কারণে ক্ষুব্ধ ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্য, সাধারণ মানুষ ও সচেতন মহল। মেম্বার নান্নুর এমন মিথ্যে অপপ্রচার ও নানা সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার (০৩জুন) পরিষদ প্রাঙ্গনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইউনিয়নের বিভিন্ন পর্যায়ের সুবিধাভোগী, ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্য ও ইউনিয়ন বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। 
 

ইউনিয়নের ইকরতাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা: মুক্তা বলেন, তার পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ দেখে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান ও মেম্বার সোহেল ভাই তার বাড়িতে গিয়ে তাকে কার্ড করে দিয়েছেন। যার ফলে তিনি ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় প্রায় ২বছর ধরে চাল পেয়ে আসছেন। চাল পেয়ে তিনি খুবই উপকৃত হয়েছেন। কেউ তার কাছ থেকে কোন টাকা চায়নি। যারা চেয়ারম্যান সোহেল ভাইয়ের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মিথ্যা অপপ্রচার করছেন আল্লাহ তাদের ভালো করবেন না। 
 

ইউনিয়নের আদমদূর্গাপুর গ্রামের মোছা: জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তিনি নিয়মিত ভিজিডির চাল পেয়ে আসছেন। কিন্তু স্থানীয় মেম্বার কিংবা চেয়ারম্যানসহ কেউ তার কাছ থেকে কোন টাকা চায়নি এবং কাউকে টাকা দিতেও হয়নি। এমনকি সঠিক ওজনেই চাল বিতরণ করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ভিজিডির চাল নিতে হয়েছে এমন সংবাদ মিথ্যে ও বানোয়াট। এমন অপপ্রচারে ইউনিয়নের ভালো মানুষগুলোর সঙ্গে ইউনিয়নের সুনামও নষ্ট করা হচ্ছে। 
 

ইউনিয়নের কাদোয়া গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম বলেন দীর্ঘ পনের বছর ধরে সোহেল ভাই মেম্বার হিসেবে তাদের সেবা দিয়ে আসছেন। কাউকে কোন সেবা দিয়ে তিনি একটি টাকা নিয়েছেন এমন অভিযোগ শতভাগ মিথ্যে ও বানোয়াট। একজন ভালো মানুষকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রাখতেই মূলত এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে কতিপয় মন্দ মানুষরা। তিলকপুর ইউনিয়নের জন্য এমন অপপ্রচার সত্যিই দু:খ্যজনক। এমন অপপ্রচারে ইউনিয়নের চরম ক্ষতি হচ্ছে। অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি সংশ্লিষ্ঠদের সুদৃষ্টি কামনা করেন।  
 

পরিষদের মহিলা সদস্য ও ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান মোছা: হিরা বেগম বলেন, কোন কারণ ছাড়াই গত ৫আগস্টের পর নান্নু তার বাহিনী নিয়ে তার বাড়িতে হামলা করে। তাকে ও তার স্বামীকে মারপিট করে লুটপাট করে। নান্নুর বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেও কোন লাভ হয়নি। তিনিসহ এলাকাবাসী নান্নুর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ। তার নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই মার খেতে হয়। অহেতুক পুলিশি হয়রানীর শিকার হতে হয়। নান্নু এখনো তাকে যে কোনো সময় মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। তার ভয়ে তিনি নওগাঁ শহরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছেন। মেম্বার নান্নুর বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। 
 

পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার চেস্টা করে আসছে। কিন্তু পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য ও সোহেল রানাকে সামাজিক ভাবে হেয় করতে মেম্বার ইয়াসিন আলী নান্নু প্রতিনিয়ত একটার পর একটা অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে। বিগত সময়ে ইউনিয়ন পরিষদে দেশীয় অস্ত্রসহ নান্নু নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পরিষদের ইউপি সদস্যের উপর চড়াও হয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে পরিষদের একজন ইউপি সদস্য এমদাদ আলীকে গুরুতর ভাবে মারধর করেছে নান্নু। বর্তমানে ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ পরিষদ থেকে সুন্দর পরিবেশে সেবা পাচ্ছেন। প্যানেল চেয়ারম্যানের উন্নয়ন মূলক কাজে বাধা দিতেই মেম্বার নান্নু এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছে। পরিষদের শান্তিপূর্ণ একটি পরিবেশ বজায় রাখতে এমন ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত করে অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন সাবেক এই চেয়ারম্যান।
 

মেম্বার ইয়াসিন আলী নান্নু মুঠোফোনে জানান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সম্পন্ন মিথ্যে ও বানোয়াট। পরিষদের সবাই আ’লীগ পন্থার। তারাই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করছে যাতে আগামীতে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে না পারেন। আনিত অভিযোগগুলোর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবী জানান তিনি। 
 

পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান  ও মেম্বার মো: সোহেল রানা জানান তিনি ২০০১সাল থেকে মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবা করে আসছেন। প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ইউনিয়নবাসীর পাশে থেকে কাজ করে আসছেন তিনি। কিন্তু পরিষদের অপর মেম্বার নান্নু নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এবং তাকে সামাজিক ভাবে তাকে হেয় করতে নান্নুর পোষা ও ভাড়া করে আনা কিছু লোকের মাধ্যমে মিথ্যে নানা অপপ্রচার চালিয়ে আসছেন। নান্নু নানা সময়ে তার বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পরিষদের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে এবং পরিষদের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড যেন বন্ধ হয়ে যায় সেই লক্ষ্যেই নান্নু বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে আসছেন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সকল ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার কাজ অব্যাহত রাখবেন বলে জানান চেয়ারম্যান।
 

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইবনুল আবেদীন মুঠোফোনে জানান তিলকপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে  জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।