ইসরায়েল কি আবারও আরেকটি যুদ্ধে যাবে

প্রকাশকালঃ ০১ জুলাই ২০২৪ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ ৩৯৯ বার পঠিত
ইসরায়েল কি আবারও আরেকটি যুদ্ধে যাবে

গাজায় যুদ্ধ চলছে আট মাসের ওপর। ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাসকে টার্গেট করে এ যুদ্ধ শুরু করেছিল ইসরায়েল। হামাসকে ধবংস করতে না পারলেও তারা ৪০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ইসরায়েল এখন দক্ষিণে লেবাননের প্রভাবশালী শিয়া গ্রুপ হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে নতুন একটি ফ্রন্ট খোলার কথা ভাবছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেছেন। গত আট মাসে তিনি কোনো টিভিতে দীর্ঘ সাক্ষাত্কার দেননি।

 

হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা শুরুর পর থেকেই হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে উদ্দেশ করে রকেট ছুড়েছে। ইসরায়েলও এর পালটা জবাব দিয়েছে। তবে কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের বিমান হামলায় এক সিনিয়র হিজবুল্লাহ কমান্ডার নিহত হওয়ার পর সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দুই সীমান্তকেই অনিরাপদ করে তুলেছে ইসরায়েল। এই দুই সীমান্তের কাছাকাছি ১৪ লাখ বাসিন্দাকে দেশের ভেতর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।


মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন অতি সম্প্রতি বলেছেন, তিনি মনে করেন না যে ইসরায়েল অথবা হিজবুল্লাহ কেউ বড় পরিসরে যুদ্ধে জড়াতে চায়। তবে তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে বলে তার ধারণা। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাত্জও অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, সর্বাত্মক যুদ্ধ হলে হিজবুল্লাহ শেষ হয়ে যাবে এবং লেবাননেরও যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হবে। তবে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মতে, সে রকম যুদ্ধ হলে ইসরায়েলকেও যথেষ্ট মাশুল গুনতে হবে। কারণ শক্তি ও আঞ্চলিক অবস্থার দিক থেকে হিজবুল্লাহ হামাসের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ওরেনের মতামতও অনেকটা সেরকম। তিনি বলেন, হামাস ইসরায়েলের জন্য সীমিত পরিসরে হুমকি কিন্তু হিজবুল্লাহর হুমকি ব্যাপক পরিসরে এবং দীর্ঘমেয়াদি। ওরেন বারাক ওবামার সময় যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহর কাছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র আছে। যেগুলো দিয়ে তারা ইসরায়েলের উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা এড়িয়ে বড় শহরগুলোতে আঘাত হানতে পারে।


তিনি বলেন, ‘বড় কোনো যুদ্ধ হিজবুল্লাহ তিন দিনে আমাদের যে ক্ষতি করতে পারবে তার পরিমাণ নেহায়েত কম হবে না। তেল শোধনাগার, বিমানঘাঁটি, দিমোনা (পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র) আমাদের প্রধান অবকাঠামো। এগুলো হিজবুল্লাহর টার্গেটের মধ্যে থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়। কিছুদিন হিজবুল্লাহ ড্রোন দিয়ে তোলা ইসরায়েলের হাইফা বন্দরের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এর মধ্য দিয়ে তারা এই বার্তা দিয়েছে যে ইহুদি রাষ্ট্রটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তাদের নাগালের মধ্যে।

 

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ ২০০৬ সালে ৩৪ দিনের এক যুদ্ধে জড়িয়েছিল। ঐ যুদ্ধের পর অনেকটা সময় কেটে গেছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর গ্রুপটি সেখানে বাশার আল আসাদের পক্ষে লড়াই করেছে। লড়াই এবং নতুন সরঞ্জামাদির মধ্য দিয়ে হিজবুল্লাহ আগের চেয়ে শক্তিশালী  হয়েছে। হামাসের মতো হিজবুল্লাহরও লেবাননের ভেতর টানেল নেটওয়ার্ক আছে। এটি হামাসের চেয়েও উন্নতমানের বলে ইসরায়েলের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। গাজা বহির্বিশ্ব থেকে একটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড। ইসরায়েলের নজরদারি এড়িয়ে বাইরে থেকে সেখানে সরঞ্জামাদি আনা সহজ নয়।

 

এদিক দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে হিজবুল্লাহ। ইরাক ও সিরিয়ার ভেতর দিয়ে ইরান ও লেবাননের মধ্যে সরাসরি সাপ্লাই লাইন রয়েছে। ফলে যুদ্ধ বেধে গেলে হিজবুল্লাহকে সরঞ্জামাদি পাওয়া নিয়ে উদ্বেগে থাকতে হবে না। ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেই লেবানন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজধানী বৈরুতসহ অন্যান্য শহর হামলার নিশানা হতে পারে। ২০০৬ সালের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধ চলাকালেও দেখা গেছে ইসরায়েল ব্যাংক ও স্কুলসহ বিভিন্ন বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা করেছে। 

 

হিজবুল্লাহ শুধু একটি গেরিলা বা মিলিশিয়া গ্রুপ নয়। তাদের রাজনৈতিক শাখাও আছে। লেবাননের রাজনীতিতেও তাদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইসরায়েলের এবারের হামলার লক্ষ্য হতে পারে লেবাননে হিজবুল্লাহর শাসনের অবসান। তাই সে রকম কিছু ঘটলে লেবাননের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটি হবে বিশাল।’ গত বছর ৭ অক্টোবর গাজায় লড়াই শুরুর পর হামাসের সমর্থনে হিজবুল্লাহও সময়ে সময়ে রকেট ছুড়েছে। বর্তমানে গাজায় অস্ত্রবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে উদ্যোগ চলছে তা সফল হলেও লেবনন সীমান্তও শান্ত থাকবে বলে আশা করা যায়।