খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে কুড়িগ্রামের শহিদুলের পরিবারের

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:৫২ অপরাহ্ণ   |   ৫১ বার পঠিত
খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে কুড়িগ্রামের শহিদুলের পরিবারের

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের উত্তর ছাট গোপালপুর গ্রামের গৃহহীন শহিদুল ইসলাম পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। দুই শিশু সন্তান, অসুস্থ মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি এখন আশ্রয়হীন। প্রতিদিন রাত কাটে খোলা আকাশের নিচে, ভোর হলে শুরু হয় অন্নসংস্থানের সংগ্রাম।
 

একসময় শহিদুল শিলখুড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চুক্তিভিত্তিক ঝাড়ুদারের কাজ করতেন। অন্যের জমিতে একটি ছোট্ট ঝুপড়িঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। কিন্তু অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য পরিবারসহ ঢাকায় চলে গেলে ফিরে এসে দেখেন, জমির মালিক তার বসবাসের জায়গাটি অন্য কাজে ব্যবহার করছেন। ফলে তিনি সম্পূর্ণ গৃহহীন হয়ে পড়েন।
 

এরপর শুরু হয় তাদের অনিশ্চিত জীবন। ভূরুঙ্গামারীর বিভিন্ন দোকানের বারান্দায়, রাস্তার ধারে কিংবা পরিত্যক্ত স্থানে রাত কাটিয়ে দিন কাটাতে থাকে শহিদুলের পরিবার। প্রায় ১১ মাস ধরে এভাবেই ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। সম্প্রতি তারা আশ্রয় নিয়েছিলেন ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের পুরনো ভবনের বারান্দায়। কিন্তু উপজেলা পরিষদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা তাদের জিনিসপত্র থানায় জমা দিয়ে সেখান থেকে সড়িয়ে দেন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন শহিদুল।
 

অবশেষে সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে শহিদুল পরিবার নিয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেন। দৃশ্যটি দেখে পথচারীদের ভিড় জমে যায়।
 

শহিদুলের মা ছকিনা বেওয়া (৬২) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “বাবাগো, আমাদের কোনো ঘরবাড়ি নাই। অনেক দিন ধরে ছেলেবউ আর দুইটা নাতি নিয়া উপজেলা অফিসের বারান্দায় থাকতেছিলাম। বৃহস্পতিবার দারোয়ান আমাদের জিনিসপত্র থানায় জমা দিয়ে তাড়ায় দিছে। এই ঠান্ডায় দুইটা ছোট পোলাপান নিয়া এখন আমরা কই যামু?”
 

শহিদুল বলেন, “নিজের জায়গা না থাকায় একসময় কবরস্থানের পাশে ভুতুড়ে জায়গায় থেকেছি। পরে এক দয়ালু মানুষ পরিত্যক্ত জায়গায় থাকতে দেন। কিন্তু এখন কোথাও ঠাঁই নেই। কাজ করলে খেতে পাই, না পেলে অনাহারে থাকতে হয়।”
 

তিনি আরও বলেন, “সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনেক ঘর নাকি খালি আছে। সেখানে যদি একটা ঘর পেতাম, তাহলে আমার দুই সন্তানকে নিয়ে অন্তত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতাম।”
 

শিলখুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, “শহিদুলের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে সে সব ছেড়ে ঢাকায় চলে যায়। সে চাইলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাকে একটি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
 

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপ জন মিত্র বলেন, “শহিদুল যদি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘরের জন্য আবেদন করেন, তাহলে প্রশাসন অবশ্যই তাকে ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।”