কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে ১৯৮৯ সালে স্থাপিত হয় দুটি ভাসমান তেল ডিপো—যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড। এই ডিপোগুলোর মাধ্যমে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হতো।
তবে ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যথাক্রমে যমুনা ও মেঘনা ডিপোর তেল মজুত শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে, গত পাঁচ বছর ধরে এসব ডিপো তেলশূন্য হয়ে পড়ে আছে। ফলে বিপাকে পড়েছে ডিপোর অন্তর্ভুক্ত অনুমোদিত ২০ জন ডিলার, স্থানীয় খুচরা বিক্রেতা এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষ।
প্রতিদিন চরাঞ্চলসহ চার জেলায় সেচ মৌসুমে এবং নদীভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রমে প্রায় ৮০০ থেকে ৮৫০ ব্যারেল (প্রায় ২ থেকে সোয়া ২ লাখ লিটার) ডিজেলের চাহিদা থাকে। কিন্তু ভাসমান ডিপোতে তেল না থাকায় কৃষক, নৌচালক, জেনারেটর, ট্রাক্টর, মাহেন্দ্র ও নছিমন-করিমন চালকদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরকারি দামে তেল না পেয়ে বাধ্য হয়ে তারা খোলা বাজার থেকে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ডিজেল কিনছেন। এতে একদিকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
ডিপো দুটির ইনচার্জরা জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় তেলবাহী জাহাজ চিলমারী পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না, তাই তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে স্থানীয় শ্রমিক ও ডিলাররা এই দাবিকে পুরোপুরি মানতে নারাজ।
তারা বলছেন, নাব্যতা সংকটের অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে ডিপোগুলো অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এই অবস্থায় ডিপোর সঙ্গে যুক্ত তিন শতাধিক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ডিপোতে তেল না থাকায় ডিলাররা বাধ্য হয়ে পার্বতীপুর ও রংপুর থেকে তেল সংগ্রহ করছেন। এতে প্রতিলিটার ডিজেলের ক্ষেত্রে প্রায় ২ টাকা পরিবহণ ও অন্যান্য খরচ যুক্ত হচ্ছে। সেই তেল খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে ৪-৫ টাকা বেশি দামে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি হচ্ছে।
ডিলার হযরত আলী জানান, এই বাড়তি খরচ কৃষি খাতসহ অন্যান্য উৎপাদন কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, চিলমারীর ভাসমান ডিপো দুটির সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ডিপো দুটি পরিদর্শন করেছে। তারা ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, স্থানীয়দের প্রত্যাশা—এ অজুহাতের আড়ালে যেন প্রকৃত সমস্যা আড়াল না থাকে।