দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উদ্যোক্তা শ্রেণিতে যখন নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে, তখন শেয়ারবাজারে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো চিত্র। শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারী বাড়ার পরিবর্তে কয়েক বছর ধরে কমছে। গত চার বছরের ব্যবধানে দেশের শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ বা সাড়ে ৩৯ শতাংশ কমে গেছে। বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার ধারণসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৭ মার্চ শেয়ারবাজারে নারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯২। আর ৭ মার্চ মঙ্গলবার দিন শেষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৬ অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে ২ লাখ ৯৭ হাজার ১৪৬ নারীর বিও হিসাব বন্ধ হয়েছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, পুরুষের তুলনায় নারীদের বিও হিসাব বন্ধের হার বেশি। গত চার বছরে পুরুষ বিও হিসাব প্রায় পৌনে ৭ লাখ বা ৩৩ শতাংশ কমে ৭ মার্চে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৯৬ হাজারে।
বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত দুই কারণে শেয়ারবাজারে নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। প্রথমত, কয়েক বছর ধরে মন্দাভাব থাকার কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি সবার আগ্রহ কমে গেছে। দ্বিতীয়ত, ২০২০ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে আবেদনের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি বাজারে ২০ হাজার টাকা ন্যূনতম বিনিয়োগের শর্ত আরোপের কারণে সামগ্রিকভাবে বিও হিসাবের সংখ্যা কমে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় নারী বিও হিসাবও কমে গেছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের আগে শেয়ারবাজারে বিও হিসাবের বড় একটি অংশই ব্যবহার হতো শুধু আইপিও আবেদনের জন্য। আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি বাজারে ৫০ হাজার টাকার ন্যূনতম বিনিয়োগের নতুন শর্ত দেওয়ার পর বিও অ্যাকাউন্ট আরও কমে। নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমে যাওয়ার পেছনে এটিও একটি বড় কারণ। আগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যেত নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের একটি বড় অংশ পুরুষ বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে ব্যবহার করতেন। সেই সুবিধা এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিও হিসাবের সংখ্যাও কমে গেছে। সিডিবিএলের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। আইপিও আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিনিয়োগের শর্তারোপের পরপরই ২০২১ সালের ৮ মার্চ শেয়ারবাজারে নারী বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ লাখ ৮৭ হাজার। ২ বছরের ব্যবধানে তা কমে যায়। জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘পরিসংখ্যানের হিসাবে শেয়ারবাজারে নারী বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে, এ কথা সত্য। তবে আমাদের তথ্য অনুযায়ী বাজারে প্রকৃত নারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমেনি। কারণ, আগে বেশির ভাগ নারী বিও হিসাব পুরুষেরা আইপিওতে ব্যবহার করতেন। সেই প্রবণতা কমেছে এখন। বর্তমানে যেসব নারী বিনিয়োগকারী রয়েছেন বাজারে, তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, একজন বিনিয়োগকারী একটি ব্রোকারেজ হাউসে একক ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ দুটি বিও হিসাব খুলতে পারবেন। এভাবে কোনো বিনিয়োগকারী চাইলে ১০টি ব্রোকারেজ হাউসে একক ও যৌথ নামে দুটি করে মোট ২০টি বিও হিসাব খুলতে পারেন। তবে কোনো কোম্পানির শেয়ারের আইপিওতে একক ও যৌথ মিলিয়ে কেবল দুটি বিও হিসাব থেকে আবেদনের সুযোগ পান একজন বিনিয়োগকারী। সে ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি বাজারে প্রতিটি বিও হিসাবের বিপরীতে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। শুধু নারী বিও হিসাব নয়, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজারে বিও হিসাবের চার বছরের ব্যবধানে সাড়ে ৩৪ শতাংশ কমে গেছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৭ মার্চে সব মিলিয়ে বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৮ লাখ ২৫ হাজার। চার বছর পর এ সংখ্যা কমে হয়েছে ১৮ লাখ ৫২ হাজার ২৩৩টি। শেয়ারবাজারে লেনদেন করতে হলে ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি বিও হিসাব থাকা বাধ্যতামূলক। সাধারণভাবে শেয়ারবাজারে একটি বিও হিসাব মানে একজন বিনিয়োগকারী ধরা হয়। তবে অনেক পুরুষ বিনিয়োগকারী পরিবারের নারী সদস্যের নামে বিও হিসাব খুলে লেনদেন করেন।