টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:-
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার রাতে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার সাধুপাড়া গ্রাম থেকে বাস ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর আশুলিয়া থানার ধানসোনা এলাকার পশ্চিম পলাশবাড়ি থেকে তার ভাই রাজিব হোসেনকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এই তথ্য জানান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আহছানুজ্জামান জানান, আলমগীর হোসেনকে সাত দিনের ও রাজিব হোসেনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, বাস ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন আলমগীর ও শহিদুল ওরফে মুহিত, যারা মাদকাসক্ত। তাদের পরিকল্পনায়ই এই ডাকাতি সংঘটিত হয়। ডাকাতির পর আলমগীর নেত্রকোনায় পালিয়ে যায় এবং তার ভাই রাজিবের কাছে লুটের মালামাল জমা রাখে। তাদের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার বড় লাউতারা গ্রামে।
এর আগে, লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকা জেলার সাভার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের টান গেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে সবুজ ও শরীফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মুহিতকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মুহিত জানায়, বাস ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী ছিল আলমগীর। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনায় অভিযান চালিয়ে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আলমগীর জানায়, লুটের মালামাল তার ভাই রাজিবের কাছে রয়েছে। পরে আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে রাজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখান থেকে লুট হওয়া ১০টি মোবাইল, নারী যাত্রীদের পাঁচ জোড়া চুড়ি, তিনটি ব্যাগ, তিনটি এনআইডি কার্ড, একটি এটিএম কার্ড, বাসযাত্রীদের টিকেট, দুটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘এক নারী যাত্রী দাবি করেছেন যে ডাকাতির সময় এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।’ জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। বাসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ ধর্ষণের অভিযোগ করেননি, তবে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তদন্ত এখনও চলছে, সব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে।’
উল্লেখ্য, ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টা থেকে চারটা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা ২৫ মিনিটে গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া রাজশাহীগামী ইউনিক রয়েল বাসটি চন্দ্রা বাইপাস থেকে ৩-৪ জন নতুন যাত্রী তোলে। রাত দেড়টার দিকে হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছানোর পর ৮-৯ জন ডাকাত অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে। তিনজন চালকের আসন নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং অন্যরা যাত্রীদের মোবাইল, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে। এ সময় ২-৩ জন ডাকাত নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি করে।
ডাকাতরা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাড়িটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে পরে নন্দন পার্ক এলাকায় নেমে যায়। যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং মির্জাপুর থানায় অভিযোগ জানাতে বলে। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি বাসযাত্রী ওমর আলী অজ্ঞাত ৮-৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ সাভারে অভিযান চালিয়ে তিনজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে, যাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল, একটি ছুরি এবং ২৯,৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ পর্যন্ত পাঁচজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।