মধুর ফল ত্বিন

প্রকাশকালঃ ৩১ জুলাই ২০২৩ ০৬:৪৭ অপরাহ্ণ ১৮৩ বার পঠিত
মধুর ফল ত্বিন

গ্রিকরা অতীতে ত্বিন নামের ফলটিকে সোনার মতোই দামি মনে করতেন। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগেও ত্বিন বা ডুমুর চাষ করা হতো। পাকা লাল টুকটুকে ফলের রসাল মিষ্টি স্বাদ ফলপ্রেমীদের কাছে ত্বিনকে করেছে জনপ্রিয়। পবিত্র কোরআন, বাইবেল, ত্রিপিটক প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থেও ত্বিন ফলের উল্লেখ আছে। ভারতে ত্বিন ফল আঞ্জির নামেও পরিচিত। আঞ্জির নামে সংরক্ষণযোগ্য শুকনো ফল হিসেবে ঢাকার অভিজাত বিপণিগুলোতেও এটি পাওয়া যায়।

ত্বিন ডুমুরের আরবি নাম। বাংলায় এই ফলকে বলে ডুমুর বা মিষ্টিডুমুর, ইংরেজি নাম কমন ফিগ। ফলটির উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ficus carica, গোত্র মোরেসি। বাংলাদেশের ডুমুরের তুলনায় এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর পাতা আমাদের চেনা ডুমুরের মতো নয়। পাতাটি পাঁচটি গভীর খাঁজে খণ্ডিত।

ত্বিন গাছের প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অপরিসীম। তীব্র ঠান্ডা বা গরম, শৈত্যপ্রবাহ বা খরা—কোনো কিছুই তাকে নিঃশেষ করে দিতে পারে না। তবে বেশি বৃষ্টিপাত এর ফল ধারণের জন্য ক্ষতিকর।


বছর কয়েক হলো ত্বিন ফল কিছু শৌখিন বাগানির হাত ধরে চলে এসেছে বাংলাদেশে। অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবে এ দেশে লাগানো হয়েছে ত্বিন ফলের গাছ। কিছু নার্সারিতেও বিক্রি করা হচ্ছে ত্বিন ফলের চারা। কয়েক বছর ধরে ফলটি ফল নিয়ে বৃক্ষপ্রেমীদের মধ্যে বেশ উৎসাহ লক্ষ করা যাচ্ছে। কেউ কেউ ত্বিন ফলের কয়েকটা গাছ লাগিয়ে বাগান করেছেন। কেউ লাগিয়েছেন টবে, ছাদের বাগানে।

বাংলাদেশে এখন নার্সারিগুলোতে ত্বিন ফলের বেশ কিছু জাতের গাছ দেখা যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আসলে কোনটি আমাদের দেশের মাটি এবং আবহাওয়ায় ভালো ফলন দেবে, তা নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচ মহারাজ ও তাঁর সঙ্গীরা গবেষণা করেন। তাঁরা মিসরীয় ডুমুর ও ভারতীয় ডুমুর নিয়ে গবেষণা করে বলেছেন, ‘আমাদের দেশে এ দুটি জাতই চাষের জন্য উপযুক্ত।


তাঁরা মিসরীয় ডুমুরের গাছপ্রতি গড় ফলের সংখ্যা পেয়েছেন ৬৮ দশমিক ৩ আর ভারতীয় জাতের গাছপ্রতি ফল পেয়েছেন ১০৩টি। ভারতীয় ডুমুরের ফলের আকার মিসরীয় ডুমুরের চেয়ে ছোট। ভারতীয় ডুমুরের গাছ মিসরীয় ডুমুরগাছের চেয়ে লম্বা ও ফল কম মিষ্টি। গবেষকেরা এ দেশে মিসরীয় জাতের ডুমুর চাষ লাভজনক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জয়দেব গোমস্তা ও অধ্যাপক ইমরুল কায়েস ত্বিন ফলের সাতটি জার্মপ্লাজম নিয়ে গবেষণা করে সেগুলোর বৈশিষ্ট্যকরণের কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানান। তাঁরা গবেষণা করছেন এর বংশবৃদ্ধি ও চারা তৈরি নিয়ে। অধ্যাপক জয়দেব জানান, ডাল কেটে শাখা–কলমের মাধ্যমে সহজে এর চারা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। সারা দেশেই এর চাষ করা যায়, তবে শুষ্ক অঞ্চলে এর ফলন ভালো হবে। তাঁরাও আশা দেখছেন এ দেশে ত্বিন ফলের বাণিজ্যিক চাষের।


খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুবাইত আরাও ত্বিন ফল নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি ৩০০ কৃষকের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখেছেন, প্রায় ৭৫ শতাংশ কৃষকই নতুন এ ফল চাষ করতে আগ্রহী।

ত্বিন ফলের চাষ উপকূলীয় এলাকায়ও করা সম্ভব। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় কীর্তনখোলা গ্রামে জাদীদ আল মামুন গত বছর ৬০ শতাংশ জমিতে এক হাজার ত্বিন ফলের গাছ লাগিয়ে সে বছরেই প্রায় চার লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন। তিনি বলেন, গাছ লাগানোর পর তিন মাসের মধ্যেই গাছে ফল ধরা শুরু হয়, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পাকা ফল তোলা যায়।

গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে তিনি ফল পেয়েছেন তিন থেকে চার কেজি। প্রতি কেজি ত্বিন ফল ঢাকায় বিক্রি করেছেন ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তবে বিক্রি করা সমস্যা বলে তিনি উল্লেখ করেন। ফল ধরা শেষে তিনি গাছ ছেঁটে দেন, এরপর গাছ আবার দ্রুত বড় হয়ে যায়। গাছ বাঁচে বেশ কয়েক বছর।