কুড়িগ্রামে পানির নিচে জমির ফসল, ভিটেছাড়া শতাধিক পরিবার

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫২ অপরাহ্ণ   |   ১১৩ বার পঠিত
কুড়িগ্রামে পানির নিচে জমির ফসল, ভিটেছাড়া শতাধিক পরিবার

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমলেও তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। নিম্নাঞ্চলের রোপা আমন, শাকসবজি ও মাসকলাই ক্ষেত এখনও পানিতে ডুবে আছে।
 

জেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে প্রায় শতাধিক পরিবার ঘরছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
 

কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় প্রায় ১,৭৮৭ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
 

উলিপুরের তিস্তা তীরবর্তী থেতরাই, গুনাইগাছ, দলদলিয়া ও বজরা ইউনিয়নের বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, জমি থেকে পানি নেমে গেলেও ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
 

বজরা ইউনিয়নের চর গোড়াইপিয়ার এলাকার নুর ইসলাম বলেন, “৫০ হাজার টাকা খরচ করে দেড় একর জমিতে পেঁয়াজ, আলু, মুলা ও লালশাক চাষ করেছি। দু’দিনের বন্যার পানি সব তলিয়ে দিয়েছে। ধার দেনা করে এই চাষ করেছি। এখন বুঝতে পারছি না কিভাবে টাকা পরিশোধ করব।” তিনি জানান, তিস্তার ভাঙনে এক একর ধানসহ জমি নদীতে চলে গেছে।
 

দলদলিয়া ইউনিয়নের আব্দুল করিম বলেন, “৭০ হাজার টাকা খরচ করে ১ একর জমিতে বীজবাদাম এবং ৪০ শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। সোমবার সকালে দেখলাম সব ফসল তলিয়ে গেছে। আমার স্বপ্ন বন্যার পানিতে শেষ হয়ে গেছে।”
 

নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ ইউনিয়নের নুর ইসলাম জানিয়েছেন, “দুধকুমার নদীর ভাঙনে আমার বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। মাত্র ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছি। এখন মাথা গোঁজার জায়গা নেই।” একই এলাকার এরশাদুল হকও জানান, “চোখের সামনে বাড়ি নদীতে চলে গেছে। কিছুই করতে পারিনি। কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারছি না।”
 

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসান বলেন, নদীভাঙন রোধে চারটি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ বসানো হচ্ছে। অন্যান্য পয়েন্টে কাজের অনুমোদন পেলে তা দ্রুত শুরু করা হবে।
 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।