ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি একে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থী বলে আখ্যায়িত করেছে।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আলজাজিরাকে বলেন, “এই হামলা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা স্বার্থের ওপর সরাসরি আঘাত। জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘনের পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য দায়ী ইসরায়েলের লাগাতার যুদ্ধবাজ নীতিমালা ও আঞ্চলিক সম্প্রসারণের চেষ্টা।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পশ্চিমা বিশ্ব ইসরায়েলের এই আগ্রাসী পদক্ষেপকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ প্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ‘সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানায় উত্তর কোরিয়া।
উল্লেখ্য, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক ও সামরিক ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আক্রান্ত এই দুটি দেশ নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল।
২১ জুন রাতভর ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এতে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, পারমাণবিক অবকাঠামোর আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
এর আগে, ১৩ জুন রাতে বিনা উস্কানিতে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এক দুঃসাহসিক অভিযানে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। এতে প্রাণ হারান ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদসহ অন্তত ১০ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং আরও ৪০০-এর বেশি মানুষ।
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ২১ জুন রাতে ইরান ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ চালু করে। তেহরানের উৎক্ষেপণকৃত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। প্রাণহানি সীমিত থাকলেও ইসরায়েলের পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
উত্তর কোরিয়ার কড়া প্রতিক্রিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে এই সংঘাতময় পরিস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে বিভাজন ও মেরুকরণ তৈরি করছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ সংঘাত শুধু ইরান-ইসরায়েল সীমিত থাকবে না, বরং বড় পরিসরে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।