বাগেরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা এস. এম. হায়াত উদ্দিনের হত্যার প্রতিবাদ এবং ঘাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।
শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের আয়োজনে ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম, টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক, সাংবাদিক এস. এম. রাজ, আহাদ উদ্দিন হায়দার, হেদায়েত হোসেন লিটন, ইয়ামিন আলী, এইচ. এম. মইনুল ইসলাম, মোল্লা আব্দুর রব, এস. এস. শোহান, মিরনুজ্জামান, এস. এস. সাগর ও কামরুজ্জামান শিমুল প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে একজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, অথচ পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, নিহতের ময়নাতদন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সম্পন্ন হলেও ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও লাশ এখনো বাগেরহাটে পৌঁছেনি।
মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম. এ. সালাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জাকির হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, খান মনিরুল ইসলাম, ফকির তারিকুল ইসলাম, শাহেদ আলী রবি ও মাহবুবুর রহমান টুটুলসহ দলের অন্যান্য নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলেন, হায়াত উদ্দিন শুধু সাংবাদিকই ছিলেন না, তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এক নিবেদিত কর্মীও ছিলেন। তার হত্যাকারী যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের হাড়িখালি এলাকায় দুর্বৃত্তরা এস. এম. হায়াত উদ্দিনকে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন, সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত হায়াত উদ্দিন হাড়িখালি এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে এবং দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাগেরহাট পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন, যদিও নির্বাচনে পরাজিত হন।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, হায়াত উদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও দুটি কন্যাশিশু রয়েছে। বড় মেয়ে হিয়া মনি ও ছোট মেয়ে মারজিয়া এখনো বুঝতে পারছে না, তাদের বাবা আর ফিরবেন না। স্বামীর মৃত্যুতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী ফাতেমা বেগম।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “শুধু সত্য কথা বলার কারণেই আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।”
এক প্রত্যক্ষদর্শী নারী জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হায়াত উদ্দিন হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন। হঠাৎ দুটি মোটরসাইকেলে আসা চার–পাঁচজন যুবক অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে এবং পরে দ্রুত পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারি অনিয়ম, রাজনৈতিক সন্ত্রাসসহ নানা বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন হায়াত উদ্দিন। কয়েক মাস আগেও তার ওপর হামলা হয়েছিল।
হায়াত উদ্দিনের মা হাসিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে মারধর করে। পুলিশকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিচার চাওয়ার আর জায়গা নেই, এখন আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছি।”
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “হত্যায় জড়িতদের আমরা শনাক্ত করেছি। গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। নিহতের পরিবার এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারা অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত ইসরাইল মোল্লা হাড়িখালি এলাকার আব্দুস ছালাম মোল্লার ছেলে। তিনি বিএনপির কর্মী এবং ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার সোসাইটির বাগেরহাট জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।