জুলাই ৩৬ কনসার্ট আয়োজনে ৭৬ লাখ টাকার প্রস্তাব: চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে সাবেক ছাত্রনেতা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৯ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫০ অপরাহ্ণ   |   ৫৪ বার পঠিত
জুলাই ৩৬ কনসার্ট আয়োজনে ৭৬ লাখ টাকার প্রস্তাব: চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে সাবেক ছাত্রনেতা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:-


 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের বিরুদ্ধে অনুদানের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত '৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব' নামে একটি কনসার্টের জন্য ৭০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৭৬ লাখ টাকা অনুদান চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
 

এই কনসার্টটি আগামী ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) আয়োজকদের দুই লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। তবে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়।
 

উপাচার্যের সুপারিশসহ ৭০টি প্রতিষ্ঠানে চিঠি

সালাউদ্দিন আম্মার নিজের ফেসবুক পোস্টে জানান, অন্তত ৭০টি প্রতিষ্ঠানে তারা চিঠি পাঠিয়েছেন। এসব চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের সুপারিশও সংযুক্ত ছিল। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “৩৬ জুলাই” রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, যেখানে বহু তরুণ গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। এই উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টে শহীদ পরিবার, আহতদের পরিবার, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং ছাত্রসমন্বয়করা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান সফল করতে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়।
 

চিঠিটি ‘ক্যাম্পাস বাউলিয়ানা’ নামের একটি সাংস্কৃতিক দলের পরিচালক কে এস কে হৃদয় ও সালাউদ্দিন আম্মারের স্বাক্ষরিত। রাসিকের অনুদান চেয়ে দেওয়া আবেদনের সূত্রে নগর কর্তৃপক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। তবে রাসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক খোন্দকার আজিম আহমেদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাসিক সচিব রুমানা আফরোজও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। অর্থ ছাড়পত্রে স্বাক্ষরকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন প্রশাসক স্যার, আমি কিছু বলতে পারছি না।”
 

ভাইরাল চিঠি, সমালোচনার ঝড়

ভাইরাল হওয়া চিঠিতে জানানো হয়, আয়োজনে প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতি আশা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানটিতে তথ্যচিত্র, শহীদ স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও ইন্টারেক্টিভ সেশন থাকবে। আয়োজনটি অলাভজনক দাবি করে চিঠির সঙ্গে বাজেট ও প্রোগ্রাম রূপরেখাও পাঠানো হয়।
 

সমালোচকদের মতে, এভাবে চিঠি দিয়ে চাঁদা তোলা অনৈতিক। শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চাঁদাবাজি করার মতোই মনে হচ্ছে বিষয়টি। একজন ছাত্রনেতা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমনভাবে অনুদানের নামে অর্থ চাইতে পারেন কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।”
 

একই ধরনের মন্তব্য করেন ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাফিউল ইসলাম। তার মতে, “যেখানে এখনো আন্দোলনে আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, সেখানে এই ধরনের উৎসবে সরকারি অর্থ ব্যয় প্রশ্নবিদ্ধ। জুলাই আন্দোলন ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রসংগঠনের সম্মিলিত লড়াই, সেটিকে এককভাবে কৃতিত্ব নেওয়া এবং সরকারি টাকায় উদযাপন করা শহীদদের সঙ্গে প্রতারণার সামিল।”
 

আয়োজকদের ব্যাখ্যা

সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “আমরা কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে অর্থ চাইনি। প্রস্তাবনা দিয়েছি ৭০টির মতো প্রতিষ্ঠানে, যেখানে উপাচার্য স্যারের সুপারিশও ছিল। রাসিকের অনুদান নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”
 

কে এস কে হৃদয় বলেন, “স্পন্সরের জন্য প্রপোজাল পাঠানো নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে সংস্কৃতি, সাহিত্য, খেলাধুলাসহ নানা আয়োজনেই প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ দেয়। ব্যাংকগুলো CSR ফান্ড থেকে দেয়, অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি পেমেন্ট করে, আয়োজকদের হাতে কিছু আসে না।”
 

উপাচার্যের অবস্থান

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, “আমি শুরুতেই বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় এ আয়োজনে কোনো অর্থ সহায়তা দেবে না। আয়োজকেরা নিজেরা উদ্যোগ নিলে আমি অন্যান্য সাংস্কৃতিক দলের মতোই সুপারিশ দিয়েছি।”
 

প্রাসঙ্গিক বিতর্ক

আন্দোলনের আরেক সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা অভিযোগ করেন, এই আয়োজনে কারা জড়িত তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, “আমরা জুলাই নিয়ে সিনেমার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গিয়েছিলাম, তিনি কোনো সহায়তা দেননি। এখন কনসার্টে কীভাবে সহায়তা দেওয়া হলো, সেটাও প্রশ্নের বিষয়।”