ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মহাবৈ গ্রামের রাজীব মিয়া ওরফে হিরো আলম (৩২), সৌদি আরবে অবস্থানকালে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার (২ জুন) সকালে দাম্মামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ ও সহায়-সম্পদ বিক্রি করে এক বছর আগে হোসেনপুর উপজেলার আদম ব্যবসায়ী আজিজুলের মাধ্যমে সৌদি আরব যান হিরো আলম। তাকে একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি এবং ৪০ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তিনি কাজ পাননি। আকামা না থাকায় কাজ পেতে সমস্যায় পড়েন, পরে বড় ভাইয়ের সহায়তায় সামান্য একটি কাজ পেলেও তা দিয়ে নিজের খরচ মেটানোও সম্ভব হচ্ছিল না।
এরই মধ্যে দেশে থাকা পরিবারটি ঋণের চাপে পড়ে যায়। পাওনাদারেরা টাকা আদায়ের জন্য স্ত্রী চাঁদনি বেগমের কাছেও চাপ দিতে থাকে। প্রতিদিন ফোনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা ও উত্তেজনা চলতে থাকে।
সোমবার সকালে হিরো আলম ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রীকে ফোনে কথা বলেন। টাকা পাঠানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে বড় মেয়ে আশা মনি (১২) ও ছোট মেয়ে হাবিবা আক্তারের (৭) সঙ্গে কথা বলেন। ছোট মেয়ের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে তিনি গলায় ফাঁস দেন। মুহূর্তেই ফোনের স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে যায়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ভিডিও কলে এমন দৃশ্য দেখে তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। শোকগ্রস্ত মা আনোয়ারা বেগম (৮০) আহাজারি করতে করতে একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন।
নিহতের ছোট মেয়ে হাবিবা বলে, “বাবা বলছিলেন, ভালো করে পড়াশোনা করতে, তার জন্য দোয়া করতে। এরপরই ফাঁসিতে ঝুলে যান।”
হিরো আলমের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম সৌদি আরব থেকে ফোন করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, হিরো আলম একজন পরিশ্রমী ও স্বপ্নবান যুবক ছিলেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির আশায় প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতারক আদম ব্যবসায়ীর প্রতারণার শিকার হয়ে জীবন দিয়েছেন তিনি। এলাকাবাসী এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আজিজুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
অভিযুক্ত আজিজুল মোবাইল ফোনে সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, “পাঠানোর তিন মাস পর আমার কোনো দায়িত্ব থাকে না। সে কীভাবে টাকা জোগাড় করে গেছে, তা আমার দেখার বিষয় না।” এরপরই তিনি ফোন কেটে দেন।
বি.দ্র.: আত্মহত্যা একটি সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংকট। কারো মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা, পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা প্রয়োজন।