রাতে স্বামীর জন্মদিন উদযাপন, সকালে পদ্মা নদীতে মিলল স্ত্রীর মরদেহ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০১ মার্চ ২০২৫ ০৪:১৭ অপরাহ্ণ   |   ৯১ বার পঠিত
রাতে স্বামীর জন্মদিন উদযাপন, সকালে পদ্মা নদীতে মিলল স্ত্রীর মরদেহ

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:-


 

শুক্রবার রাতে শাশুড়ি ও অন্যান্য স্বজনদের সঙ্গে স্বামীর জন্মদিন উদযাপন করেন আঞ্জুমান মায়া (১৬)। কেক কাটার পর মধ্যরাতের দিকে তিনি নিখোঁজ হন। পরদিন সকালে পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। শনিবার সকাল ৯টার দিকে কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের কালোয়া এলাকা থেকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

 


 

আঞ্জুমান মায়া কয়া ইউনিয়নের আজিজ শেখের ছেলে আসিফ শেখের (১৮) স্ত্রী ছিলেন। আসিফ কয়া মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং একটি বেসরকারি কোম্পানির খাদ্য পরিবেশক। তিনি কুষ্টিয়া সদরের ত্রিমোহনী বারখাদা এলাকার আজিম উদ্দিনের মেয়ে আঞ্জুমান মায়ার স্বামী ছিলেন।
 

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, আঞ্জুমানের উপসর্গজনিত রোগ ছিল এবং সে কারণে তাকে রাতে ঘর থেকে বের করে পদ্মা নদীতে ফেলে মারা হয়েছে। তবে বাবার বাড়ির লোকজন অভিযোগ করেছেন যে, ব্যবসার টাকা না পেয়ে স্বামী আসিফ আঞ্জুমানকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে।
 

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে মরদেহ পাঠানোর পর নৌপুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক মো. মনির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আঞ্জুমান মায়ার নানা বাড়ি কয়া ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায়। সাত মাস আগে নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আঞ্জুমান ও আসিফের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দু'মাস পর তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপর সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয় এবং দাম্পত্য জীবন সুখী ছিল।
 

শুক্রবার আসিফের জন্মদিন ছিল। বিকেলে আঞ্জুমান স্বামীকে কেক কিনে আনেন এবং রাত ৮টায় স্বামী ও শাশুড়ি নিয়ে জমকালোভাবে কেক কাটেন। রাত ১০টার দিকে সবাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু রাত ১টার দিকে আসিফ দেখেন, তাঁর স্ত্রী ঘরে নেই। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেন, কিন্তু পাওয়া যায়নি। সকালে স্থানীয়রা পদ্মা নদীতে ভাসমান মরদেহ দেখতে পায়।
 

মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর আসিফের বাড়িতে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় জমায়। আঞ্জুমানের শাশুড়ি ফেরদৌসী খাতুন জানান, 'প্রেম করে বিয়ে করলেও সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। রাত ১টার দিকে শুনি, আঞ্জুমান ঘরে নেই। সবাই মিলে সারারাত খুঁজেও পাইনি, সকাল ৬টায় নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়।'
 

আসিফ শেখ জানিয়েছেন, তারা খুব ভালো সংসার করছিলেন। তিনি স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, 'রাতে জন্মদিন পালন করলাম, রাত ১০টার দিকে শুয়ে পড়ি। তখন আঞ্জুমান মায়া ফোন চালাচ্ছিল। পরে রাত ১টার দিকে দেখলাম সে ঘরে নেই, সারারাত খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি।'
 

কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, 'স্থানীয়রা সকালে নদীতে মরদেহ দেখতে পান। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সঠিক কারণ জানা যাবে।'
 

এদিকে, আঞ্জুমানের মা পারভীন খাতুন দাবি করেছেন, 'আসিফ আমার মেয়ে ছলনা করে বিয়ে করেছে এবং টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করেছে। আমার মেয়ের কোনো রোগ ছিল না। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।'
 

কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, 'খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নৌপুলিশ।'